দেশজুড়ে

জরাজীর্ণ টিনের ঘর, অন্য স্থানে রাখা স্কুলের চেয়ার-টেবিল

প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি টিনের ঘর ছাড়া কিছুই জোটেনি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছাতুনামা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাগ্যে। নেই চেয়ার-টেবিল, বসার বেঞ্চ, লেখার জন্য হোয়াইট কিংবা ব্ল্যাক বোর্ড। বিদ্যালয়ে আসার জন্য নেই কোনো রাস্তা।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে ছাতুনামা মধ্যপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। এরপর সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হয়। সরকারি প্রাথমিক হিসেবে চালুর সাতবছর পেরিয়ে গেলেও এর উন্নয়নের কোনো অগ্রগতি নেই।

আব্দুল ওহাব নামের স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনার আগে চরের এ বিদ্যালয়টিতে ১৫০-২০০ শিক্ষার্থী মাটিতে পাটি বিছিয়ে পড়াশুনা করতো। দুই তিনজন শিক্ষকও ছিলেন। কিন্তু করোনার পর ক্লাস শুরুর মতো কোনো অবস্থা নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম বলেন, ১১ বছরে বিদ্যালয়টিতে কেউ এক মুঠো মাটিও দেয়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কখনও এদিকে ঘুরতেও আসেন না। স্কুলে আসার মতো নেই কোনো রাস্তা। তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেলেই স্কুলটি বুক পানিতে ডুবে থাকে।

আমিনুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, স্কুলটি সরকারি হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। এখানে সরকারি বড় দালান হবে, আমরা চরের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের এসব জায়গায় আশ্রয় নিতে পারবো। কিন্তু এ ১১ বছরে স্কুলটির কোনো উন্নয়ন চোখে পড়েনি।

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, স্কুলটি সরকারি হয়েছে আমি জানি। তবে স্কুলটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও শুনেছি। আমার কাছে এটা নিয়ে কেউ আসেনি। ফলে এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারছি না।

স্কুলের জমিদাতা সুদির চন্দ্র রায় বলেন, জমি দিয়েছি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য। এ এলাকার ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হবে। কিন্তু স্কুলটি সরকারি হলেও বর্তমানে এ স্কুলে আসা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য কিছু চেয়ার-টেবিল ছিলো তাও গেল বন্যায় শেষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লোকা আক্তার বলেন, স্কুলের কিছু চেয়ার-টেবিল আছে। বন্যার কারণে সেগুলো মানুষের বাসায় রেখেছি। তবে স্কুলটির উন্নয়ন হলে শিক্ষা কার্যক্রম আরও গতি পাবে। সেই সঙ্গে এ দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষও উপকৃত হবে।

ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, স্কুলের ভেতরের এমন অবস্থা আমার জানা ছিলো না। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে আগামী ১২ তারিখ শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরু করতে পারে।

নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবিজ উদ্দিন সরকার বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। আপাতত যেন অস্থায়ী জায়গায় ছাউনি করে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা যায় সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আরএইচ/এএসএম