নদীভাঙনের জেরে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বিলুপ্ত ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, নতুন ওয়ার্ডে (৩ নম্বর ওয়ার্ডকে ১ নম্বর করা হয়েছে) তাদের অন্তর্ভুক্ত করায় বিভিন্ন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এজন্য তারা আগের ওয়ার্ডে ফিরে যেতে চান।
রাজাপুর ইউনিয়নের কানিবগার চরের বাসিন্দা (বর্তমান ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার) মো. আইন আলী জাগো নিউজকে বলেন, নদীভাঙনের কারণে আমরা ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ বর্তমানে ভোলার চর, কানিবগার চর ও বঙ্গের চরে বসবাস করছি। আমাদের এখন নতুন ১ নম্বর ওয়ার্ড রামদাসপুরের ভোটার করা করা হয়েছে। এতে ভোটের সময় দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ করে ট্রলার ভাড়া করে আমাদের রামদাসপুর গিয়ে ভোট দিতে হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজাপুর ইউনিয়নটি নদীভাঙনের কারণে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ১২ ও ১৩ ধারা মোতাবেক ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ডিলিমিটেশন (সীমানা পুনর্বিন্যাস) কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ওই কর্মকর্তার প্রদত্ত প্রতিবেদন মোতাবেক রাজাপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করে ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্তভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। পরে নির্বাচন অফিস ২০১৮ সালের দিকে ভোটার তালিকার পুনর্বিন্যাস কাজ শুরু করে।
বিলুপ্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজম আলী খান বলেন, আমরা এ (বর্তমান ১ নম্বর) ওয়ার্ডের আগে প্রায় তিন হাজার ভোটার ছিলাম। ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে ১ নম্বর ওয়ার্ড করায় বর্তমানে এ ওয়ার্ডে আট হাজারেরও বেশি ভোটার হয়েছে। অথচ ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩০ হাজারের মতো।
আরেক বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, আমাদের ওয়ার্ডটি পুনর্বিন্যাস করায় এখন নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ডের ওয়ার্ড পরিবর্তন করতে নির্বাচন অফিসে গিয়ে লাইন দিতে হচ্ছে। বসতবাড়ির ও জমির কাগজপত্র ঠিক করতে ভূমি অফিসে গিয়েও লাইন দিতে হয়। এতে আমরা অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা পেশায় জেলে। তাই আয়ও খুব সীমিত। অথচ ওয়ার্ড জটিলতায় বিভিন্ন কাজ করতে ভোলা সদরে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের একদিন যাতায়াতে ২০০-৩০০ টাকা খরচ হয়। এতো টাকা আমরা কীভাবে খরচ করবো?
সালেহা বেগম ও হাসিনা বেগম নামের দুই গৃহিণী বলেন, আগে ৩ নম্বর ওয়ার্ড (এখন ১ নম্বর) থাকতে আমাদের এখানে সরকারি অনেক সহযোগিতা পাইছি। কিন্তু এখন ১ নম্বর ওয়ার্ড করায় ভোটার সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। এখন আগের মতো সরকারি সহযোগিতা পাই না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের আগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে আগের মতোই করে দেওয়া হোক।
তারা আরও বলেন, আমরা এখানকার মানুষ মহিষ পালন, কৃষিকাজ ও মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু এতো টাকা খরচ করে ভোট দিতে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আগের ১ বা ২ নম্বর ওয়ার্ড স্থাপন করে সহজে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, নদীভাঙনের কারণে রাজাপুর ইউনিয়নের সবগুলো ওয়ার্ড আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এতে বিশেষ করে বিলুপ্ত ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও বর্তমান ১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোট দিতে অনেক সমস্যা হবে। তাই আগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে পুনরায় ৩ নম্বর ওয়ার্ড করে দেওয়া হোক।
জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি রাজাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করা হয়। ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট আমাদের কাছে ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাসের কাগজ এলে আমরা সে অনুযায়ী ভোটার তালিকার বিন্যাস কাজ শুরু করি। তবে সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য যদি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তাহলে ইউএনওর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসআর/এএসএম