মানুষ কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম ও শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। পর্যটক হিসেবে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন যে কোনো জায়গা থেকে। কম খরচেও পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। তবে ভিন্ন এক জগৎ উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার থেকে। পাঠকদের বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. রবিউল ইসলাম—
কক্সবাজার: ছুটিতে ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের তুলনা হয় না। সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। কক্সবাজার গেলে সকাল-বিকেল সমুদ্রতীরে বেড়াতে মন চাইবে। কারণ এখানে আছে নীল জলরাশির গর্জন। এছাড়া মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী, সেন্টমার্টিনও কক্সবাজারকে করেছে আকর্ষণীয়। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কুহেলিয়া ও নাফ নদী। পর্যটন, বনজসম্পদ, মাছ, শুঁটকি, শামুক, ঝিনুক ও সিলিকাসমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজারের অবস্থান সবার শীর্ষে।
এখানে গিয়ে বেড়াতে পারবেন হিমছড়ি ও ইনানী বিচে। কক্সবাজারের ১২-২২ কিলোমিটারের মধ্যে এ দুটি আকর্ষণীয় স্থান। যারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চান, তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অথবা সরাসরি বাসে কক্সবাজারে যেতে পারেন। এসি, নন এসি, ডিলাক্স ও সাধারণ বাস পাবেন। কক্সবাজারে আছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। তবে ভ্রমণের আগে ফোনে যোগাযোগ করে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ভালো।
ভ্রমণ পরিকল্পনা: যেহেতু কেউ ১ রাত, কেউ ২ রাত, কেউ আবার ৩ রাতের পরিকল্পনা করেন। তাই ৩ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করতে পারেন—
এক রাত: আপনাদের হাতে ২ দিন ১ রাত সময়। চাইলে নিজেরা কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন। সকালে চেক ইন করবেন ১২টায়। তারপর সব গুছিয়ে ১টার দিকে সমুদ্রে চলে যান। গোসল, ফটোগ্রাফি সব সেরে ২টার মধ্যে চলে আসেন হোটেলে। সেখান থেকে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে অটো নিয়ে চলে যান হিমছড়িতে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সানসেট দেখতে চলে যান ইনানী বিচে। সন্ধ্যার পর ফিরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে বার্মিজ মার্কেট বা শহরে কেনাকাটা সেরে ফেলেন। কারণ পরদিন আর সময় পাওয়া যাবে না কেনাকাটার জন্য।
২য় দিন সকাল ৭টায় নাস্তা করে অটো নিয়ে ট্রলার ঘাটে চলে যান। অটোওয়ালাকে বলে নেবেন মহেশখালী যাবো। ঘাটে গিয়ে স্পিডবোট রিজার্ভ নিতে পারেন বা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। মহেশখালী গিয়ে রিকশা নেওয়ার দরকার নেই। হেঁটেই সব দেখা যায়। দুপুর হলে ঘাটে এসে কক্সবাজার ব্যাক করে অটো নিয়ে হোটেলে। দুপুরে খেতে পারেন যে কোনো রেস্টুরেন্ট। খাওয়া-দাওয়া সেরে লাবনী বিচে যেতে পারেন। তারপর সন্ধ্যায় ব্যাগ নিয়ে বাস কাউন্টারে।
দুই বা তিন রাত: প্রথমদিন সকালে চেক ইন করবেন ১২টায়। তারপর সব গুছিয়ে ১টার দিকে সমুদ্রে চলে যান। গোসল, ফটোগ্রাফি সেরে ৩টার মধ্যে চলে আসেন। তারপর চলে যান দুপুরের খাবার খেতে। বিকেলে সি ক্রাউনের সামনে সানসেট উপভোগ করতে পারেন। রাতে খেতে পারেন পছন্দের কোনো রেস্টুরেন্টে।
পারলে আগের দিন চান্দের গাড়ি ম্যানেজ করে রাখবেন। বা হোটেলে বললেও ম্যানেজ করে দেবে। অথবা ৪-৫ জন হলে ব্যাটারি চালিত অটো নিতে পারেন। নাস্তা করে অটো নিয়ে চলে যান হিমছড়ি। হিমছড়িতে লোকাল ছোট একটি বাজার আছে। পাহাড়ে উঠে বিশাল সমুদ্র দেখা যায় বাইনোকুলার দিয়ে। এরপর একই রোডে চলে ইনানী বিচে। সেখানে বিচ বাইক দিয়ে ঘুরতে পারবেন। ক্ষুধা লাগলে ব্যাটারি চালিত অটোতে শহরে ফিরে আসেন। এবার রেস্টুরেন্ট চলে যান।
বিকেলে বার্মিজ মার্কেট। কক্সবাজার শহর থেকে অটো নিয়ে যেতে হয় আদিবাসি মার্কেটগুলোয়। কারণ শেষদিন কেনাকাটা করা খুবই প্যারা। দ্বিতীয় দিন আরামে সময় নিয়ে কেনাকাটা করতে পারবেন। কিছু বাদ গেলে ৩য় দিন হুট করে এসে কিনে নিতে পারবেন। সন্ধ্যার পর লাবনী বিচে যেতে পারেন। রাতে খেতে চলে যান রেস্টুরেন্টে।
৪র্থ দিন সকালে উঠে ব্যাগ হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কে দিয়ে দিন। অথবা একটি রুম রেখে দিতে পারেন সব ব্যাগ রাখা আর দুপুরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তাহলে সারাদিন ঘুরে কাটাতে পারবেন আরামে। এদিন নিজের ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরি করেন। রামু বৌদ্ধ মন্দির আছে, চাইলে রামুতে ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়া নিজের মতো করে ঘুরতে পারেন। অথবা রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড ঘুরে আসতে পারেন। বাচ্চা থাকলে দারুণ সময় কাটবে।
প্যারাসেইলিং করলে: প্যারাসেইলিং কক্সবাজারের নতুন আকর্ষণ। হিমছড়ির পরে দরিয়া নগর এলাকায় ১০০ টাকা অটো ভাড়া নেবে। দিনে আবহাওয়া ভালো থাকলে প্যারাসেইলিং করতে পারেন। তাদের মূলত ১৫০০ এবং ২৫০০ টাকার ২টা প্যাকেজ আছে। দুই প্যাকেজেই মিনিট পাচেকের মতো সময় আপনাকে সমুদ্রে ঘুরিয়ে আনবে। তবে ২৫০০ টাকার প্যাকেজে আপনাকে সমুদ্রের ভেতর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে এবং পা পানিতে ভিজিয়ে উপরে তুলে আনবে বলে শুনেছি।
কী খাবেন: খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সবার বিশাল টেনশন থাকে। মূলত সবচেয়ে বড় ঝামেলা হচ্ছে থাকবো মাত্র ১-২ দিন, এর মধ্যে কতই বা খেয়ে শেষ করা যায়। তাই সবাই চায়, বাজেট কম-বেশি যা-ই হোক; যাতে বেস্ট ফুড ট্রাই করা যেতে পারে তৃপ্তি সহকারে।
কোথায় থাকবেন: একেক জনের থাকার বাজেট একেক রকম। কারো বা কোনো রকমে রাত পার করলেই চলে। কেউ আবার সারাবছর জব করে ২টা রাত একটু আরামে কাটাতে চান। তাই সব ধরনের বাজেটের হোটেল রয়েছে এখানে। আপনাদের সুবিধামতো যোগাযোগ করে নেবেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, সম্মান ২য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
এসইউ/জেআইএম