দেশজুড়ে

ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ দুই মেম্বার প্রার্থী

নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘলী ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের মো. কমর আলী ও তার চাচাতো ভাই আলী আহমদ। সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাদের মেম্বার হওয়ার স্বপ্ন মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ভোটার তালিকায় নাম নেই। তাদের মৃত দেখানো হয়েছে সেখানে।

একই গ্রামের বাসিন্দা মো. কমর আলী (৪৩) ও আলী আহমদ (৩৯)। কমর আলী গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তখন আলী আহমদের ইচ্ছা থাকলেও চাচাতো ভাই বর্তমান ইউপি সদস্য হোসাইন আহমদকে সুযোগ দিতে সরে দাঁড়ান। এবার কমর আলী ও আলী আহমদ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আগে থেকেই মাঠে আছেন। আলী আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, হোসাইন আহমদ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি মেম্বার। তিনি আমার চাচাতো ভাই। গত নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন একই গ্রামের মো. কমর আলী। তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাড়ার সবাই মিলে বৈঠক করে আমাদের দুজনের মধ্যে একজনকে প্রার্থী হতে বলেন। তখন সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হোসাইন আহমদ প্রার্থী হন। সেদিনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার হোসাইনের বদলে প্রার্থী হওয়ার কথা আমার। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকায় আমার নম্বরের খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, আমার নামই নেই। পরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে।

কমর আলী জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর সামান্য ভোটের কারণে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছি। এবার নির্বাচনের জন্য আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু নির্বাচনের মনোনয়ন প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখি ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই। পরে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমি নাকি মৃত। এটাও সম্ভব!

কমর আলী ও আলী আহমদ অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নির্বাচন অফিসে টাকা দিয়ে বর্তমান ইউপি মেম্বার হোসাইন আহমদ ভোটার তালিকা থেকে আমাদের নাম বাদ দিয়েছেন। কারণ নির্বাচন কার্যালয় গিয়ে বারবার অনুরোধ করেছি যে কাগজ দিয়ে আপনারা আমাদের মৃত বানিয়েছেন সেই কাগজগুলো দেখান। তবে তারা কোনো কাগজ দিতে পারেননি। যদি মৃত থাকার কারণে নির্বাচন না করতে পারি এবং এটির দ্রুত সমাধান না হয় তাহলে আমরা দুজন আইনি পদক্ষেপ নেবো।

জানতে চাইলে বর্তমান ইউপি মেম্বার হোসাইন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, কমর আলী ও আলী আহমদ আমার ওপর মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি তাদের ‘মৃতের’ বিষয়ে কিছুই জানি না। মৃত্যু সনদ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এটা চেয়ারম্যান দিয়ে থাকেন।

ছাতক উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি মারা যান তাহলে বিষয়টি তার পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়দের পক্ষ থেকে নির্বাচন কার্যালয়কে জানাতে হয়। পরে নির্বাচন কার্যালয় থেকে একজন মাঠকর্মী সেটির তদন্ত করে দেখেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তার যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মৃত্যুর কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদও লাগে।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ–সৈদেরগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মৃত থাকার বিষয়ে কমর আলী ও আলী আহমদ আমাকে জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছি। তারা কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে এ কাজ যারা করেছেন তাদের শাস্তি দিতে হবে।

ছাতক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়েজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় হতে পারে। তখন আমি ছাতকে কর্মরত ছিলাম না। তাই এটা কে করেছেন, সেটা আমি জানিনা। তবে যে দুজনের নাম বাদ পড়েছে, তারা আবার নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন। এগুলো অনুমোদনের জন্য কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে অনুমোদন হলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ১৯ ইউপিতে নির্বাচন হবে। ১ অক্টোবর থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। ভোট গ্রহণ হবে ১১ নভেম্বর।

লিপসন আহমেদ/এসআর/আরএইচ/এমএস