মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন নিয়ে আমানত শাহ নামের ফেরিডুবির কয়েক ঘণ্টাপর উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’।
এরপর থেকেই কর্তৃপক্ষ জানিয়ে আসছিল শিমুলিয়া ঘাট থেকে ‘প্রত্যয়’ নামের আরও একটি ফেরি উদ্ধারকাজে যোগ দেবে। ঘটনাস্থলের দিকে সেই জাহাজ রওনাও হয়েছে। এরমধ্যে হামজা একটি-দুটি করে ডুবে যাওয়া ট্রাক উদ্ধার শুরু করলেও, সবাই তাকিয়ে ছিল প্রত্যয়ের দিকে। স্থানীয়দের ধারণা ছিল প্রত্যয় এসে কাজ শুরু করলে হয়তো উদ্ধার তৎপরতায় গতি ফিরবে।
কিন্তু দুর্ঘটনার তিনদিন পর বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক জানালেন, প্রত্যয় দিয়ে ফেরিটি উদ্ধার সম্ভব নয়। এজন্য প্রত্যয় নয়, শিমুলিয়া থেকে ডাকা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমকে।
চেয়ারম্যানের এমন ঘোষণার পরই ডুবে যাওয়া যানবাহনের চালক ও মালিকসহ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা অনেকেই প্রশ্ন তোলেন তাহলে বিআইডব্লিউটিএ কেন তিনদিন ধরে প্রত্যয় আসছে বলে মিথ্যাচার করলো।
ফেরিডুবির তিনদিন পর শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। ঘাটে পৌঁছেই তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্ধারস্থল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়েও বের করে দেন তিনি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা তৈরি হয়। পরে চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের জানান, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধার করতে প্রত্যয় জাহাজটি দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে আসতে যে পরিমাণ পানি থাকার প্রয়োজন সেটি নেই এখানে। তাই পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যয় আর আসবে না।
তিনদিন পরে এ সিদ্ধান্ত কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জরুরি কাজে বিদেশ ছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে এসেছি। তবে মুন্সিগঞ্জ থেকে রুস্তম আসার কথা রয়েছে। প্রথমে ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলো উদ্ধার করাই তাদের লক্ষ্য।
গোলাম সাদেক জানান, ফেরিটি উদ্ধার করতে সরকারিভাবে সম্ভব না হলে বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নেওয়া হবে। ফেরি উদ্ধারের আগে ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলো আগে উদ্ধার করবো। পরে হয়তো ফেরিটি কেটে সরানো হবে বলে তিনি জানান।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ২টা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া আমানত শাহ ফেরি থেকে আরও দুটি ট্রাক উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে গত তিনদিনে ১১টি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হলো। এখনো চারটি ট্রাক ও ১৩টি মোটরসাইকেল পানিতে তলিয়ে আছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর (বুধবার) সকাল পৌনে ১০টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটে আমানত শাহ নামের রো রো ফেরিটি কাত হয়ে ডুবে যায়। এসময় যাত্রী ও যানবাহন চালকরা হুড়োহুড়ি করে নেমে আসেন। উদ্ধারে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা যানবাহন উদ্ধারে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বি.এম খোরশেদ/আরএইচ/এমএস