তথ্যপ্রযুক্তি

ছিল জেলখানা, এখন বিশ্বের মুক্ত আকাশ

খুনি, চোর, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, রাজনৈতিক কারণসহ বিভিন্ন অপরাধে বন্দিদের আশ্রয়স্থল জেলখানা এখন সৃজনশীল কাজের চারণভূমি। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন অনেকে। পড়ালেখার পাশাপাশি কেউ কেউ মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন। কেউ হয়েছেন উদ্যোক্তা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে অর্ডার পেয়ে কাজ করছেন আগের সেই জেলখানায় বসে। এ যেন আকাশবিহীন বন্দি জায়গায় বিশ্বের মুক্ত আকাশ। আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সুবিধা খুলে দিয়েছে বন্দিদশা। অনেকে বেকারত্ব থেকে মুক্ত হয়েছেন। কেউ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে স্বস্তি পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ তৈরি করছেন শত শত নতুন উদ্যোক্তা।

এটি নাটোরের ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ এর কথা। প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, টিশার্টের উপর লেখা ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, কেউ ডাটা অ্যান্ট্রি, কেউ ইউটিউবার হয়ে আবার ওয়েব অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখে অনলাইনেই ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।

নাটোরের রাজাপুর কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সুরুজ ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছি। আমি ওয়েব ডিজাইনার ও ডেভেলপার। দেশের ও বিদেশের অর্ডার পেয়ে কাজ করি। তবে বেশি অর্ডার আসে বিদেশ থেকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কানাডা থেকেও অর্ডার পাই। মাসে ১৫ হাজারেরও বেশি আয় হয়।

সেখানকার আরজু আক্তার বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করি। কোনো কোনো মাসে আমার ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আমার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়েছিল। কিন্তু বেতন শুরুতে ২২ হাজার ধরেছিল। তাই সেই চাকরি আমি করিনি।

নাটোরে পুরনো জেলখানা মেরামত করে সেখানে গড়ে তোলা হয় তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নাটোর সদরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, নাটোর স্থাপন শীর্ষক কর্মসূচিটি ৭৯৮.৮৭ (সাত কোটি আটানব্বই লক্ষ সাতাশি হাজার) টাকা ব্যয় এবং জানুয়ারি ২০১৬ হতে জুন ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাগো নিউজকে বলেন, ওই জেলখানায় আমিও বন্দী ছিলাম। রাজনৈতিক কারণে বিএনপি-জামায়াত সরকার আমাকে বন্দী রেখেছিল। এখন পুরান সেই জেলখানা বিশ্ব বাতায়ন কেন্দ্র। সেখানে শত শত ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আইটি খাতে কাজ করছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তাদের দূরদর্শিতার কারণে আমরা এখন একটি মেধাভিক্তিক সমাজ নির্মাণ করছি।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষিত বেকার তরুণ ও তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাস্তবভিত্তিক এবং নিড বেসড কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ইনকিউবেশন সুবিধার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার সৃষ্টি করা হচ্ছে. নাটোর জেলার পুরাতন অব্যবহৃত জেলখানাকে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। পরিত্যক্ত জেলখানার ৪টি ভবন মেরামত ও আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে। ছয় তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ২ তলা নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নতুন ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তাদের জন্য ১০টি ইনকিউবেশন সেল/রুম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া নতুন ভবনে একটি ট্রেনিং রুম, একটি কনফারেন্স রুম এবং অফিস কক্ষ রয়েছে।

জানা যায়, সেখানে আইটি উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১০টি ইনকিউবেশন সেল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি কোম্পানি তাদের নিজ নিজ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য কম্পিউটার, আসবাবপত্র, ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা ছিল। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ঘোষিত সে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ক্ষমতায় এসে সরকার দেশের বিভিন্ন হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এছাড়া কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা শুরু করে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প হিসেবে প্রযুক্তিকে কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তারও একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় সরকার। এইচএস/এসএইচএস/এমএস