হবিগঞ্জের মাধবপুরে মাদক চোরাচালান রোধে অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে বিজিবি। বিজিবি বলছে, এতে মাদক ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে এবং মাদক চোরাচালান থেকে তারা বিরত থাকবেন। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে হবিগঞ্জসহ দেশজুড়ে।
বিজিবি সদস্যরা সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি চিহ্নিত করে লাল রঙের লেখা ডিজিটাল সাইনবোর্ড বসিয়েছেন। উপজেলার অন্তত ১০ মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে এ সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। দিক-নির্দেশক চিহ্ন দিয়ে এতে লেখা রয়েছে-‘মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি’, ‘চোরাকারবারির বাড়ি’।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের মনতলা, হরিণখোলা ও রাজেন্দ্রপুর বিওপির সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামের ১০টি বাড়িতে গিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দিনব্যাপী মাদক ও চোরাকারবারিদের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর, বাড়ির প্রবেশের রাস্তায়, দেওয়াল ও গাছে লাল রঙের ডিজিটাল ব্যানারের সাইনবোর্ডে লাগানো হয়।
চিহ্নিত করা ১০টি বাড়ি হচ্ছে-মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বলু মিয়া, রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আহাদ মিয়া, শ্রীধরপুর গ্রামের কবির মিয়া, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ধনু মিয়া, রামনগর গ্রামের কাউছার মিয়া, রামনগর গ্রামের জয়নাল মিয়ার, রামনগর গ্রামের সফু মিয়া, কমলপুর গ্রামের স্বপন মিয়া, খালেক মিয়া ও জানু মিয়ার বাড়ি। এ ১০ জন মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময়ে মাদকসহ বিজিবির হাতে ধরা পড়েন।
বিজিবির এ উদ্যোগের ফলে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কেউ কেউ। একইসঙ্গে মাদক কারবারে জড়িত প্রত্যেকের বাড়িতেই যেন এভাবে চিহ্নিত কার্যক্রম অব্যাহত থাকে সে দাবিও উঠেছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। চলতি মাসে এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন থেকে নিয়মিত এ অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক এ অভিযানে গিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাদক সম্পর্কে সচেতন করা হয়। একইসঙ্গে এসব সাইনবোর্ড যেন কেউ তুলে না ফেলেন বা মুছে না ফেলেন সে বিষয়েও কঠোর হুঁশিয়ারি করা হয়।
তবে অপরাধী দু-একজন হলেও পুরো বাড়িকে এভাবে চিহ্নিতকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, এভাবে চিহ্নিতকরণ সাইনবোর্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেই বাড়ির শিশুদের মানসিকতায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল কাইয়ূম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইনগতভাবে আসলে এটি লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ আদালত যতক্ষণ পর্যন্ত একজনকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত এটি করার সুযোগ নেই। আদালত যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করেন তাহলে সেটি লাগানো যাবে। বিজিবি কেন লাগিয়েছে তা তারাই বলতে পারবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যানার লাগানোটি আইনসঙ্গত নয়। দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও কেন একজনকে সামাজিকভাবে এভাবে পরিচিত করতে হবে?’
মাদকবিরোধী এ কার্যক্রম সম্পর্কে বিজিবি হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এন এম সামীউন্নবী চৌধুরী বলেন, বিজিবির হাতে ধরা পড়া চিহ্নিত মাদক কারবারিদের বাড়িতেই এভাবে সাইনবোর্ড লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ মাদক নির্মূলে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করেন।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর