গর্ভধারণকালে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে, তখন অনেকেই টের পান তিনি গর্ভবতী। তবে জানেন কি, গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই শরীরে প্রকাশ পায় একাধিক লক্ষণ।
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই আপনি কিছু লক্ষণ দেখে গর্ভধারণের ইঙ্গিত পেতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে অনেকেরই জানা নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পিরিয়ড মিস না হওয়া সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক নারী।
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ: মাসিক বন্ধ হওয়া: গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো নির্ধারিত সময়ে মাসিক না আসা। হালকা রক্তক্ষরণ (ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং): নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে বসলে হালকা রক্তক্ষরণ হতে পারে। বমিভাব ও বমি (Morning Sickness): হরমোন পরিবর্তনের কারণে বিশেষ করে সকালে বমিভাব ও বমি হয়। ক্লান্তি ও দুর্বলতা: শরীরে শক্তি বেশি খরচ হওয়ায় অল্পতেই ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়। স্তনে পরিবর্তন: স্তনে ব্যথা, টান বা বোঁটার রঙ পরিবর্তন হতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: গর্ভাবস্থায় কিডনিতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রস্রাবের চাপ বাড়ে। কোমরে ও তলপেটে ব্যথা: জরায়ুর পরিবর্তনের কারণে কোমর ও তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হয়। খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা বিতৃষ্ণা: নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা হঠাৎ বিরক্তি হতে পারে। মনোভাবের পরিবর্তন (Mood Swings): হরমোনের কারণে খুশি, দুঃখ বা বিরক্তির ওঠানামা দেখা দেয়। কখন পরীক্ষা করবেন?মিসড পিরিয়ডের অন্তত ৭ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়পিরিয়ড ছাড়াও নানা শারীরবৃত্তিয় ঘটনা আছে, যা গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। জেনে নিন পিরিয়ড মিস ছাড়াও শরীরের যেসব পরিবর্তন দেখে গর্ভধারণের বিষয় নিশ্চিত হতে পারেন-
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিরিয়ড মিস করার আগে অর্থাৎ গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই ৮০ শতাংশ নারী বমির সমস্যায় ভোগেন। আবার ৫০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৬ সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি অনুভূত হতে থাকে।
স্তনে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া গর্ভধারণের অন্যতম এক লক্ষণ। কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ১ম বা ২য় সপ্তাহের মধ্যেই স্তনে ব্যথা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীর ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়। গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসে এ সমস্যা হতে পারে। হরমোনে পরিবর্তনের ফলে এই ডিসচার্জ হয়। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি গর্ভধারণের আরও একটি লক্ষণ। এ সময় নানা কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভধারণকালে প্রোজেস্টেরোনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি হয়। গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে পিরিয়ড বন্ধ না হলেও ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করলেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করে দেখেন। এই ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনেক সময় গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। পিরিয়ডের তারিখ ছাড়াও যদি হঠাৎ কখনো ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হয়, তাহলেও প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে নিন। ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, স্পটিং ও ক্র্যাম্পস প্রেগনেন্সির দিকে ইশারা করে। গর্ভধারণকালে মুড সুইং ও মাথা ঘোরা খুবই সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের সময় হরমোনে নানা পরিবর্তনের কারণে আকস্মিক কান্না, হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, আনন্দিত হওয়া, আবার অতিরিক্ত এক্সাইটেড হয়ে পড়েন গর্ভবতী নারী। প্রেগনেন্সির শুরুর দিনে মাথাব্যথা অনুভূত হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায় রক্ত সঞ্চালন ও হরমোনের স্তর বৃদ্ধির কারণে এমন হয়। এ সময় তীব্র মাথা ব্যথার পাশাপাশি ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতাও গর্ভধারণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ওভ্যুলেশান প্রক্রিয়ার পর গর্ভধারণ সম্পন্ন হলে, দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হয়।গর্ভাবস্থার সময় শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে, যা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।
গর্ভধারণের শুরু থেকেই অধিকাংশ নারীর স্বাদ বদলে যায়। অনেকে এমন কিছু শাক-সবজি বা খাবার খেতে শুরু করে দেন, যা তারা আগে খেতে পছন্দ করতেন না।আবার পছন্দের খাবারও অনেক গর্ভবতী নারী খেতে চান না। এ ছাড়াও গর্ভবতী নারীদের দিন বা রাতে যে কোনো সময়, যে কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়উপরের লক্ষণগুলো থাকলেই যে আপনি নিশ্চিতভাবে গর্ভবতী, তা বলা যায় না। অনেক সময় হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, মানসিক চাপ কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণেও এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই যদি এসব পরিবর্তন অনুভব করেন এবং গর্ভধারণের সন্দেহ হয়, তবে দেরি না করে একজন যোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/মেডিকেল নিউজ টুডে
জেএমএস/জিকেএস