দেশজুড়ে

সেনুয়ায় প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই চলছে নির্বাচনী সহিংসতা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে ঠাকুরগাঁওয়ের সেনুয়া ইউনিয়নে বেড়েই চলেছে নির্বাচনী সহিংসতা। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারধর ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর যেন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তম ধাপে জেলায় এবার শুধুমাত্র বড়গাঁও ও সেনুয়া ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে একমাত্র সেনুয়ার নির্বাচনী উত্তাপ হার মানিয়েছে আগের সব ধাপের নির্বাচনকে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনার অভিযোগ প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রার্থীর প্রায় ১১টি নির্বাচনী অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে কিছুদিন আগে চার সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। সর্বশেষ শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে সেনুয়া ইউনিয়নের চৌধুরী হাট বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানের মোটরসাইকেল প্রতীকের অফিস ভাঙচুর ও সমর্থকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে মোটরসাইকেলের ছয়জন সমর্থক গুরুতর আহত হন বলেও জানা গেছে।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নবেল কুমার সিংহের সমর্থকরা এই সহিংসতা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় চৌধুরী হাট স্কুলে নৌকার উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ধীরে ধীরে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলযোগে সেখানে কয়েকশ’ বহিরাগত মানুষ ভিড় করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমার অফিসে এসে চেয়ার টেবিলে ভাঙচুর শুরু করে। অফিসের থাকা সমর্থকদের মারধরও করা হয়। এতে আমার ছয়জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছে।’

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে নৌকার প্রার্থী নোবেল কুমারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য রয়েল বড়ুয়া।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নৌকার উঠান বৈঠক শেষে আমরা বের হচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় কিছু মানুষ আমাদেরকে উসকানি দিয়ে ডাকাডাকি করে। আমরা এগিয়ে গেলে তারা আরও বেশি বিরক্ত শুরু করে। তাই তাদের শিক্ষা দেওয়ায় জন্যই মাইর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওরা আমাদের নৌকার অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাই তাদের শিক্ষার দরকার ছিল।’

এমন সহিংসতা অব্যাহত থাকলে কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের সংখ্যা কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক রাসেদুল রানা। তিনি বলেন, ‘সহিংসতার কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ বেশ শঙ্কায় আছে। যদি দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায় তাহলে নির্বাচনের দিন ভোটার খুঁজে পাওয়া কষ্ট কর হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিল। কিন্তু অন্ধকার ও বৃষ্টির কারণে প্রতিরোধ করতে পারেনি। তবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’

সহিংসতার বিষয়ে সেনুয়া ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেনুয়ায় বেশ কিছু ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। কিছু অভিযোগ ঘিরে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। এরপর এমন অভিযোগ পেলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তানভীর হাসান তানু/এসজে/এমএস