দেশজুড়ে

ব্যবস্থাপত্রে কিছু না লিখেই ওষুধ দিচ্ছেন চিকিৎসক!

টাকা দিয়ে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) সংগ্রহ করছেন রোগীরা। তবে ব্যবস্থাপত্রে রোগের বিবরণ, ওষুধের নাম ও ডোজ কিছুই লিখছেন না চিকিৎসক। আলাদা টোকেনে ওষুধের নাম লিখে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোন ওষুধ কয়বার খেতে হবে তা লেখা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের আড়াকান্দি গ্রামের মহরুদ্দিন মোল্লার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫)। কান ও মাথাব্যথা এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২০ টাকা দিয়ে ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করে ১০৩ নম্বর রুমে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক আলাদা কাগজে টোকেনে তাকে এক পাতা পেইনো (ব্যথার ওষুধ) এবং একপাতা ক্যালসিয়ামের ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু ব্যবস্থাপত্রে একটি অক্ষরও লেখেননি

হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেওয়ার পর বৃদ্ধা রহিমা জানাতে চান কোন ওষুধ কয়বার খাবেন। কিন্তু ব্যবস্থাপত্রে কিছুই লেখা না থাকায় ফার্মাসিস্টরাও পড়েন বিপাকে।

উপজেলার কাতরাসিন গ্রামের অটোরিকশাচালক রাজা মিয়ার স্ত্রী হ্যাপী আক্তার চিকিৎসকের কাছে এসেছেন শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ে। তারও ব্যবস্থাপত্রে কিছু না লিখে আলাদা টোকেনে মাত্র এক পাতা ব্যথার ওষুধ লিখেছেন চিকিৎসক। ফার্মেসি থেকে এক পাতা ওষুধ হাতে পাওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন হ্যাপী।

এসময় হাসপাতাল ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে আসা আরও বেশ কয়েকজন রোগীর কাছে লেখাবিহীন ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের ১০৩ নম্বর রুমের চিকিৎসকই এমন কাণ্ড করছেন।

কর্তব্যরত ফার্মাসিস্টরা জানান, ব্যবস্থাপত্রে কিছু লেখা না থাকায় রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ব্যবস্থাপত্রে অথবা টোকেনে ওষুধের ডোজ লেখা না থাকায় ওষুধ দিতে গিয়ে তারা বিপদে পড়ছেন।

ব্যবস্থাপত্রের সূত্র ধরে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ১০৩ নম্বর রুমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন মেডিকেল অফিসার আলিফ উল আরিফ। ব্যবস্থাপত্রে কোনো কিছু না লিখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছেন হাসপাতাল থেকে শুধু সরকারি ওষুধ নিতে আসেন। এজন্য শুধু ওষুধ লিখে দেই তাদের।’

কয়েকজন রোগী শারীরিক জটিলতার কথা বলার পরও ব্যবস্থাপত্রে কিছু লেখেননি এবং টোকেনে ওষুধের ডোজও উল্লেখ করেননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আরিফ বলেন, ‘ব্যবস্থাপত্রে সবকিছুই লেখা উচিত। কিন্তু রোগীর চাপের কারণে অনেক সময় তা হয়ে ওঠে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারী বলেন, ‘ব্যবস্থাপত্রে রোগের বিবরণ এবং ওষুধপত্র লিখে দেয়াই নিয়ম। তবে কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগ তার কাছে নেই। তবে ভবিষ্যতে যাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন আলী চৌধুরী বলেন, ‘শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অটোমেশন প্রদ্ধতিতে ব্যবস্থাপত্র হওয়ার কথা। কিছু না লিখে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বি.এম খোরশেদ/এসআর/জিকেএস