ভাষাশহীদদের স্মৃতিরক্ষায় কুমিল্লায় উদ্বোধন করা হয়েছে ভাষা চত্বর। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লার ধর্মসাগরের উত্তরপাড় নগর উদ্যান সংলগ্ন সড়কে এ চত্বরের উদ্বোধন করা হয়।
পাঁচজন ভাষাশহীদ ও কুমিল্লার ৩৪ ভাষাসৈনিকের নাম রয়েছে এ চত্বরে। তবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি সম্পন্ন করেছেন স্থানীয় শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন।
ভাষার মাসে এমন উপহার পেয়ে খুশি নগরবাসী। উদ্বোধনের খবরে সকাল থেকে এ চত্বরে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। উৎফুল্ল মনে ছবি তুলতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলামসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভাষা চত্বরের নির্মাতা শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামকে ছাড়া বাংলা ভাষার ইতিহাস অসম্পূর্ণ। এছাড়া অনেক ভাষাসৈনিকের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদের কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে নগর শিশু উদ্যানের সামনের সড়কের তেমুহনীতে তৈরি হচ্ছে ভাষা চত্বর। এতে নতুন প্রজন্ম ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ছয় ফুট জায়গার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের বর্ণমালা-সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার; ১৮ ফুট জায়গায় রয়েছে শহীদ মিনার, রক্তিম সূর্য, চার পাশে রয়েছে ভাষাশহীদদের ছবি ও কুমিল্লার ভাষাসৈনিকদের নাম। ভাষাসৈনিকদের নামের পাশে রয়েছে পানির ফোয়ারা ও নান্দনিক আলোকসজ্জা। শহীদদের সম্মানে ভাষা চত্বরের কাজে কোনো টাকা নেবেন না বলে জানান এই শিল্পী।
নির্মাণকাজে কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক জোগান দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে কুমিল্লা সবসময় অগ্রগামী ছিল। ভাষা আন্দোলনেও কুমিল্লার মানুষ সংগঠিত হয়। ভাষা আন্দোলনে কুমিল্লা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামসহ অনেকের অবদান অবিস্মরণীয়। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে আমার পক্ষ থেকে এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য এটি একটি বইয়ের মতো। ভাষা চত্বরটি অনেক সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি যে কারো নজর কাড়বে।’
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন নগরীর ঝাউতলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নগরীর উজিরদিঘীর পাড়ের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার। মৃত্যুর তিন বছর পর ২০১৬ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এএসএম