দেশজুড়ে

২ মন্ত্রীর দু’বার উদ্বোধনের পরও অচল ট্রমা সেন্টার!

সড়কে দুর্ঘটনায় যে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের হাড়ভাঙা জোড়া দেওয়ার কথা, সে প্রতিষ্ঠানটিকেই জোড়াতালি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় উদ্বোধনের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্পূর্ণরূপে চালু হয়নি কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায় অবস্থিত ট্রমা সেন্টারটি। মাত্র একজন চিকিৎসক, চারজন নার্স ও একজন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কোনোরকম চলছে সেন্টারের বহির্বিভাগ। অথচ জোট ও মহাজোট সরকারের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীই এর উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে গড়ে ওঠে এ ট্রমা সেন্টারটি। গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেন্টারটির উদ্বোধন করা হলেও পুরোপুরি চালু সম্ভব হয়নি।

অথচ মহাসড়কে প্রায় সময় কুমিল্লার কোনো না কোনো জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে আহতদের স্থানীয় ডাক্তাররা দ্রুত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু ঢাকা নেওয়ার পথে চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বিএনপি দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর সেন্টারটির প্রথমে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মাস খানেক পর সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ.ন.ম রুহুল হক ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটি ঢাকঢোল বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

সে সময় এক মাসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রমা সেন্টারের প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি এবং জনবল দেত্তয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু ঘোষণার প্রায় ১১ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এর কোনো কার্যক্রম চালু হয়নি।

সরেজমিনে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্টমা সেন্টারটির কার্যক্রম চালু না হত্তয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গৌরীপুর-হোমনা-বাঞ্ছারামপুর, গৌরীপুর-সাচার-কচুয়া, গৌরীপুর-মতলব-চাঁদপুর, ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর রোডে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কোনো রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. কামরুল হাসান অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, আর কতবার উদ্বোধন করলে এ ট্টমা সেন্টারের কার্যক্রম চালু হবে?

শাহনাজ পারভিন নামে এক নারী বলেন, কিছুদিন আগে আমার এক ভাই মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাকে প্রথমে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে চিকিৎসকরা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা যাওয়ার মতো হাতে তেমন টাকা ছিল না। তাই অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমাদের এই ট্রমা সেন্টারটি যদি সম্পূর্ণরূপে চালু হতো তাহলে আমাদের আর হয়রানি হতে হতো না।

ট্রমা সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, একটি কক্ষে আউটডোরের মাধ্যমে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। একমাত্র উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা আমিনা খানম এ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে।চারজন নার্স ও একজন আউটসোর্সিংয়ের সাহায্যে আমরা এখানে রোগীদের আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহীদ আল-হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। বর্তমানে ট্রমা সেন্টারটিতে একটি কক্ষে আউটডোরের মাধ্যমে জেনারেল চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রমা সেন্টারটি সম্পূর্ণরূপে চালুর জন্য কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, আমদের ডাক্তার-নার্সের স্বল্পতা রয়েছে। ট্রমা সেন্টারটি সম্পূর্ণরূপে চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এসজে/এমএস