দেশজুড়ে

থেকেও নেই নীলফামারী হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ

নীলফামারীতে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও প্রতিদিন প্রায় শতাধিক রোগীকে এই হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে চিকিৎসকের অভাবে এই হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কার্ডিওলজি বিভাগটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে।

২০১৫ সালে কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগ স্থাপিত হলেও চিকিৎসক না থাকায় সেটি বন্ধ রয়েছে। হৃদরোগের চিকিৎসায় সেখানে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতিও। এরপরও হৃদরোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নালীফামারীবাসী। বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে রোগীদের। এতে অনেক রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে পথেই প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু কার্ডিওলজি বিভাগ নয়, হাসপাতালের সব বিভাগেই রয়েছে চিকিৎসক সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে হৃদরোগের দুটি ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক ১০ শয্যার ওয়ার্ডের জন্য সেখানে ডি-ফেসিলেটর মেশিন দুটি, কার্ডিয়াক মনিটর ২০টি স্থাপন করা হয়। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বছরের পর বছর বিভাগটি তালাবদ্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি বিকল হতে বসেছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৪১ চিকিৎসকের পদই শূন্য। মাত্র ১৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। সার্জারি, অর্থসার্জারি, গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রতিটিতে একজন করে মোট সাতজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, এসব বিভাগসহ ইএনটি, রেডিওলজি, চর্ম ও যৌন, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিন বিভাগে আরও ১১ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫০ পদের মধ্যে ৩২টিই শূন্য রয়েছে।

কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক, চর্ম ও যৌন রোগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় আন্ত বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। পাশাপাশি কার্ডিওলজি বিভাগটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এছাড়া এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরএম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোসকোপ, ডায়াথার্মি, অটোক্লেবসহ ৩৯টি মেশিনের মধ্যে ১৮টিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি। এছাড়া হাসপাতালজুড়ে নেই উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য নেই সিসিটিভিও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোসকোপ, অটোএনালাইজার, ডায়াথার্মি ও অটোক্লেব মেশিনসহ ৩৯টির মধ্যে ১৮টি যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি। অপরদিকে, হাসপাতালের তিনতলা নতুন ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ও কেবিন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পুরো হাসপাতালে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আনসার নিয়োগসহ আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মেয়াদ বাড়ানো জরুরি।

জেলা শহরের উকিলের মোড়ের বিপ্লব বলেন, আমার বাবা গত এক বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, এখানে এই রোগের চিকিৎসক নেই। আপনারা রংপুরে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরই তিনি মারা যান।

পুরাতন টার্মিনাল এলাকার নাসরিন বেগম বলেন, অ্যালার্জির সমস্যার কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কেটেও চিকিৎসকের দেখা পাইনি। ফলে হাসপাতালের অন্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে সাময়িক চিকিৎসা নিয়ে চলে আসি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু-আল-হাজ্জাজ জাগো নিউজকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। এখানে আসার পর জানতে পারি হাসপাতালে একটি কার্ডিয়াক ইউনিট আছে, কিন্তু ইউনিটটি দীর্ঘদিন থেকে চালু হচ্ছে না। এ ইউনিটটি চালু করতে গেলে এখানে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ লাগবে এবং অন্য যে সাপোর্টিং ম্যান পাওয়ার তা লাগবে। এ ইউনিটটি চালু করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই এটা চালু হবে। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

হৃদরোগ বিভাগ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে নীলফামারী সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর কবির জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি লিখিত আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এসজে/এমএস