বহু বছর পর অতি বিপন্ন প্রজাতির পাখি শকুনের দেখা মিললো মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরের বিরইমাবাদ চকের বন্দ এলাকায়। এখানে দলবেধে ৯টি শকুন অবস্থান করছিল একটি শিমুল গাছে।
বন জঙ্গল ও উঁচু গাছপালা কেটে ফেলায় শকুনের আবাসন সংকট দেখা দেয়। ফলে উপকারী এ পাখিটি বিপন্নের তালিকায় চলে যায়।
ফরেস্ট বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী ৩০০ মতো শকুন বাংলাদেশে আছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে অর্ধেক শকুনের বসবাস। কিছুদিন আগে মৌলভীবাজারের দেওরা ছড়া চা বাগানের উঁচু গাছে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। উঁচু গর্জন গাছগুলো কেটে দেওয়ায় এখান থেকে চলে গেছে। বর্তমানে হবিগঞ্জের রেমা ফরেস্টে এদের বসবাস রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য শকুনের সংখ্যা রয়েছে সিলেট ও সুন্দরবনে। সরকার এসব এলাকাকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা ঘোষণাও করেছে। এছাড়াও কিছু শকুন সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
মৌলভীবাজারের বিরইমাবাদ গ্রামের চকের বন্দের মুকিত মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ বছর পর শকুনের দেখা পেলাম। ছোটবেলায় এলাকায় গরু মারা গেলে শকুনের ওড়াউড়ি দেখতে খুব ভালো লাগতো।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শকুন বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ পশু ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহৃত কিটোপ্রোফেন ও নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেনাক প্রয়োগ। এই ওষুধ গরুকে দেওয়ার পর যদি গরু মারা যায় সেই মরা গরু খেয়ে শকুনও মারা যায়। এই ওষুধটা যে শকুনের জন্য ভয়ঙ্কর তা কেউ জানতো না।
এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, শকুন প্রকৃতির ঝাড়ুদার। এরা জীবিত কোনো প্রাণী খায় না। বড় বড় যেসব প্রাণী মরে রোগ জীবানু ছড়ায় সেসব প্রাণী খেয়ে হজম করে শকুন। অস্বাভাবিক হারে শকুন কমে যাওয়ায় দেশে এখন অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্কসহ নানা রোগের প্রার্দুভাব বেড়ে যাচ্ছে। সিলেট বিভাগ ও সুন্দর বন এলাকায় কিছু সংখ্যক শুকুন টিকে আছে। প্রকৃতির উপকারের জন্য শকুন রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এদের আবাসস্থল ও খাদ্যের নিরাপত্তা দিতে হবে। তা না হলে শকুন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আইইউসিএন বাংলাদেশ ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে শকুন রক্ষায় একটি প্রকল্প চালু হয়েছিল। তাদের এক জরিপে ২০১৬ সালে সারাদেশে ৩শোর বেশি আর সিলেটে শকুনের সংখ্যা ছিল দু’শোর বেশি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বনাঞ্চালে এদের বসবাস রয়েছে। মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া, হবিগঞ্জের রেমা ফরেস্টের উঁচু গাছে শকুন বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটাতো। এখনও মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে মৌলভীবাজারের দীঘিরপার ও কাউয়াদীঘি হাওরে নেমে আসে। দেওরা ছড়া বাগানের উঁচু গাছ কেটে ফেলায় আর এখানে তারা বসবাস করে না।
আব্দুল আজিজ/এফএ/এএসএম