প্রবাস

আরও ৬ মিটার উচ্চতা বাড়লো আইফেল টাওয়ারের

তাইজুল ফয়েজ (প্যারিস) ফ্রান্স থেকেবিশ্বের অন্যতম স্থাপনা আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা আরও বেড়েছে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) হেলিকপ্টারের মাধ্যমে টাওয়ারের শীর্ষে বসানো হয়েছে নতুন বেতার অ্যান্টেনা৷ অ্যান্টেনাটির উচ্চতা ৬ মিটার। এ হিসাবে আইফেল টাওয়ারও আরও ৬ মিটার উঁচু হয়েছে। আইফেল টাওয়ার সোসাইটি এমন তথ্যই জানিয়েছে৷ ফলে এ টাওয়ারটির বর্তমান উচ্চতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩০ মিটার।

প্রায় ২২ বছর আগেও একবার টাওয়ারটিতে অ্যান্টিনা স্থাপন করা হয়েছিল। তখনও টাওয়ারের উচ্চতা বেড়েছিল। বিশ্ব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আইফেল টাওয়ারে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে রেডিও সম্প্রচার করে আসছে ফরাসি সরকার। টাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহত্তর প্যারিসে ডিজিটাল বেতার সংকেত পাঠাতে নতুন অ্যান্টেনাটি ব্যবহার করা হবে।

বিশ্বে অনেক স্থাপনা রয়েছে যেগুলো নিজ নিজ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে এবং জাতীয় সুনাম অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় আয়ের উৎসও হয়ে উঠে। আইফেল টাওয়ারও ব্যতিক্রম নয়। ভালোবাসার নগরী প্যারিসের শোইন নদীর তীরে আন্তর্জাতিক মেলার প্রবেশদ্বারে আইফেল টাওয়ার। ফরাসি ভাষায় বলা হয় লা তুর্ ইফেল্।

১৮৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার ফরাসি বিপ্লবের (শতবার্ষিকী) স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতীকী মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন এ টাওয়ার নির্মাণের দায়িত্ব পান বিখ্যাত সেতু প্রকৌশলী আলেকজান্ডার গাসটেভ্ আইফেল। তার নামানুসারে স্থাপনাটির নামকরণ করা হয় আইফেল টাওয়ার।

১৮ হাজার লোহার কাঠামো ব্যবহার করে ৭ হাজার টন ওজনের এ টাওয়ারের সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য টুরিস্টদের সুবিধার্থে ১ হাজার ৭৯২ সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। পর্যটকরা টাওয়ারের উপর থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্যারিসের সৌন্দর্য এক নজরে দেখতে পারেন।

১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ দুই বছর, দুই মাস, দুই দিনে দুই একর জমির উপর চারটি পিলারের সমন্বয়ে একটি মিনার অর্থাৎ আইফেল টাওয়ার নির্মাণ হয়। রাতের সৌন্দর্য বাড়াতে ২৫ হাজার লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। ৭ বৎসর পরপর ১ হাজার ৩৫০ কেজি রং ব্যবহার করে এর সৌন্দর্য ধরে রাখা হয়। ১৯০৯ সালে টাওয়ারের উপর সংযোজন করা হয় রেডিও স্টেশন, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান রেডিও সিগনালের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল এবং হিটলার এটিকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীকালে একটি টিভি অ্যান্টেনা সংযোজন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে মিত্র বাহিনী লিফটের তার কেটে দিয়েছিল, যেন জার্মানির হিটলার বাহিনী আইফেল টাওয়ারের উপরে পতাকা উড়াতে না পারে। শত বছরের ইতিহাস হাজারো স্মৃতিবিজড়িত এ টাওয়ার দেখতে বছরে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক আসেন। এতে রয়েছে দুটি রেস্তোরাঁ লা ৫৮ ট্যুর আইফেল ও লা জুল ভান। এছাড়াও সংবাদপত্রের অফিস, পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র, থিয়েটার ও গাসটেভ্ আইফেল কক্ষ। ১৯৯১ সালে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে আইফেল টাওয়ারকে স্বীকৃতি দেয়।

বিশ্বখ্যাত এ স্থাপত্যশিল্পটি ঘিরে রয়েছে মজার মজার গল্প-কাহিনীও। এই যেমন বলা হয়েছে থাকে, ফ্রান্সে মৃতব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ আইনগত বৈধ! কিন্তু আসলেই কি তা-ই! আদতে জড়বস্তু আইফেল টাওয়ারকে ২০০৭ সালে বিয়ে করেছিলেন আমেরিকা ও ইতালির দ্বৈত নাগরিক এরিকা আয়া। তিনি ইতালিতে বসবাস করলেও সময় পেলেই ছুটে আসেন জীবনসঙ্গী আইফেল টাওয়ারের কাছে। সময় কাটান একসঙ্গে।

যে কোনো জাতীয় অর্জনে আইফেল টাওয়ারের নিচে এসে জড়ো হন ফরাসিরা। প্যারিসের এই সুউচ্চ লৌহ কাঠামো ফরাসিদের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক।

লেখক, মোহাম্মদ তাইজুল ইসলাম ফয়েজ, কেন্দ্রীয় সভাপতি,ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব

এমকেআর/জেআইএম