নীলফামারী সদর উপজেলায় মুরগির খামারে থাকা বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যাওয়া চিতা বাঘের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করেছে বন বিভাগ। শনিবার (১৯ মার্চ) ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হয় বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এদিকে আরেকটি চিতা বাঘ বেঁচে থাকার খবরে শুক্রবার ও শনিবার থেকে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর এবং স্থানীয় বনবিভাগ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
দুদিন ধরে জীবিত বাঘের সন্ধান না মিললেও কয়েক জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছে উদ্ধার কাজে আসা দলটি। এতে চওড়া বড়গাছা ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই স্থানীয়ভাবে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে।
চত্তড়া বড়গাছার স্বপন বলেন, সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি আমরা। যদি কোনোভাবে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে, সে কারণে বাড়ির দরজা লাগিয়ে ঘরে বাঁশ-লাঠি রেখে পাহারা দিয়েছি।
কাসেম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, যদিও কেউ নিজ চোখে জীবিত বাঘ দেখেনি এরপরও লোকমুখে প্রচার হওয়ায় সবাই আতঙ্কে রযেছে। যদি সত্যি সত্যি জীবিত বাঘ লোকালয়ে ঢুকে মানুষকে আক্রমণ করে তাহলে অনেকেই মারা যেতে পারে। সে ভয়ে লোকজন বাইরে বের হওয়া অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। সবাইকে সর্তক থাকতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মসজিদে মসজিদে ও রিকশায় চলছে মাইকিং।
কাঞ্চনপাড়া এলাকার ফেরদৌস বলেন, মৃত বাঘের সঙ্গে আরও একটি বাঘ বেঁচে আছে এমন কথা প্রচারের পর থেকে সন্তানদের নিয়ে আমরা ভয়ে ভয়ে রয়েছি।
ইদ্রিস আলী নামে চত্তড়া বড়গাছার এক কৃষক বলেন, বাঘের ভয়ে ধান ক্ষেতে পানি দিতে যেতে পারিনি। বনবিভাগের কর্মকর্তারা এসে এলাকায় বাঘ আছে কি না পর্যবেক্ষণ করে গেছে।
চত্তড়া বড়গাছার চেয়ারম্যান বিঠু বলেন, প্রাথমিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রমে আসা দল বাঘের পায়ের ছাপ শনাক্ত করতে পেরেছে। ঘটনার পর থেকে অনেকেই দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করছে। অন্য যে কোনো প্রাণীকে দূর থেকে দেখলে আঁতকে উঠছে সবাই।
বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বন্য প্রাণী অপরাধ দমন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাস বাঘের পায়ের চিহৃ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, এ পায়ের ছাপটি মৃত বাঘটিরও হতে পারে। এরপরও আমরা এখানে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি জীবিত কোনো বাঘ আছে কি না।
রংপুর বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, অলিয়ারের খামার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের চৌরাঙ্গী বাজারের নতিবাড়ি গ্রামের সড়কে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। এসব পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে এখানে বাঘের আনাগোনা ছিল। এরপরও আমরা আরও কার্যক্রম পরিচালনা করে নিশ্চিত হবো এখানে কোনো বাঘ রয়েছে কি না।
নীলফামারী জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম খান জাগো নিউজকে বলেন, লুকিয়ে থাকা বাঘ জীবিত অবস্থায় ধরতে কাজ করছে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে আসা বন বিভাগের তিনটি ইউনিট।
গত শুক্রবার ভোরে সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ায় মুরগি ব্যবসায়ী অলিয়ার রহমানের খামার থেকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যওয়া একটি চিতা বাঘ উদ্ধার করা হয়। শনিবার মারা যাওয়া বাঘটির ময়নাতদন্ত শেষ করেছে নীলফামারী প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আর একটি জীবিত বাঘ পাশে ভুট্টা ক্ষেতে আছে এমন খবরে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বন বিভাগের উদ্ধার টিম।
এসজে/জেআইএম