সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরে বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবলবেগে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় হাওর।
বাঁধটির কাজ অসময়ে করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার রুবেল আহমদ।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাত থেকে হাওরের ডুবাইল অংশের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধে ধস শুরু হয় এবং বাঁধের নিচ দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। স্থানীয় কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বাঁধ আটকে রাখেন।
হাওরের পাশের জৈনপুরের গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা ২০ ঘণ্টা ধরে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। তবে কংস নদের পানি কূল উপচে হাওরে ঢুকে ফসল তলিয়ে যায়।
এরআগে দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বাঁধটি পরিদর্শন করেন। তারা বাঁধ রক্ষায় আশ্বাস দেন।
কৃষক কাঞ্চন বলেন, দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেছিলাম। এখন ঋণ পরিশোধ করবো কীভাবে? আমার পরিবারের কী হবে? কৃষক শাহীন আলম বলেন, আমার পাঁচ একর জমির সব ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, হাওরের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধ দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন তারা। তারপরও বাঁধটি রক্ষায় তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টার কিছু অংশের ফসল ডুবে যাবে বলে জানান সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রুবেল আহমদ। তার দাবি, বাঁধ ভাঙায় কমপক্ষে ২ হাজার হেক্টর ফসল ডুববে।
রুবেল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। বাঁধের কাজ করেছেন দয়ালপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। সে কৃষক নয়, তাকে কীভাবে কাজ দেওয়া হলো আমরা জানি না। অসময়ে এই বাঁধ হওয়ায় পানির প্রথম ধাক্কায়ই ভেঙে গেছে।’
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকারম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বাঁধের যে অংশে ফাটল ধরেছিল, সেই অংশ মেরামত করতে করতে বিকেলে অন্য অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু হয়। তবে বাঁধের কাজ কারা করেছে আমি জানি না। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই কাজ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনতাসির হাসান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে কারা ছিল তা কাগজ না দেখে বলা যাবে না। বাঁধের কাজ ঠিকঠাকভাবেই হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
চন্দ্রসোনার তাল হাওর ডুবে ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহরুল ইসলামের বক্তব্য জানা যায়নি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দিনব্যাপী আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হাওরের বাঁধগুলো পরিদর্শন করছি। সন্ধ্যার দিকে একটি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ভাঙনের মুখ বন্ধ করে পানি আটকানো যায়।
তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে যদি কারো গাফিলতি থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
লিপসন আহমেদ/এসআর/জিকেএস