দেশজুড়ে

নীলফামারীতে ১ ও ৫ লিটার সয়াবিনের বোতল ‘উধাও’

নীলফামারীতে আবারও অস্থির হয়ে পড়েছে সয়াবিন তেলের বাজার। খোলা সয়াবিন লিটারে বেড়েছে ২০ টাকা করে আর বোতলজাত সয়াবিন তেলও বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১০ টাকা বেশি দামে। এছাড়া ১ লিটার ও ৫ লিটার সয়াবিনের বোতল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানের শুরুতে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল। এরপর সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় অস্থিরতা কিছুটা কমলেও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়তিই ছিল। তারপর সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজারে কয়েকদিন তেল বিক্রি হয়। তবে এখন নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিপ্রতি অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলের গায়ে মূল্যে লেখা থাকায় বোতলজাত তেল কম বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

নীলফামারী পৌর মার্কেটের দোকানি চন্দন সাহা বলেন, দোকানে ১ লিটার ও ৫ লিটার তেলের বোতল কয়েকদিন আগে শেষ হয়ে গেলেও ডিলাররা আর বোতলের সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। ডিলাররা বলছে, বোতলের গায়ে যে মূল্য দেওয়া আছে তাদেরকে সেই দামে কিনতে হবে। এখন বোতলের গায়ের দামে তেল কিনতে হলে আমরা কোন দামে বিক্রি করবো, তাই তেল নেওয়া বন্ধ রেখেছি।

একই মার্কেটের ব্যবসায়ী শরীফ জানান, বর্তমানে খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা ও পামওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে।

তবে ভিন্ন কথা জানান মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ডিলাররা তেল মজুত করে বাজারে না ছাড়ায় তেলের দাম বেড়ে গেছে। ডিলাররা প্যাকেটের গায়ে লেখা দামে তেল বিক্রি করায় দোকানিদের আরও বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।

আহি নামে এক নারী বলেন, কয়েকদিনের তুলনায় ২০ টাকা বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে। আমাদের মতো গরিব মানুষদের বাজার করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

নীলফামারী শহরের হোটেল ব্যবসায়ী রকি বলেন, রমজান মাসের শুরুতে সরকার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর কয়েকদিন দাম কম ছিল। এখন আবার দাম বেড়ে গেছে। খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা কেজি দরে আমি কিনলাম। এভাবে চলতে থাকলে হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

শাওন নামে এক ক্রেতা জানান, বোতলজাত তেল চাইলে অধিকাংশ দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বোতলের গায়ে দাম লেখা থাকায় বোতলজাত তেল দোকানদাররা দোকানে খুব কম রাখছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মুদি দোকানি তরিকুল ইসলাম জানান, কম দামে তেল কিনতে পারছি না বলে গত এক সপ্তাহ থেকে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

ডোমারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী আমিন স্টোরের প্রোপাইটার নুর আলম বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে তেল আমাদের কিনতে হচ্ছে। তাই কিছুটা বেশি দামে তেল বিক্রি করছি। বেশি দামে তেল না কিনলে তো তেলই পাবো না। তখন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবো কীভাবে। তাই জেনেশুনেও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে তেল কিনে বিক্রি করছি।

সহিদুল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম হতে তেল কিনছি অতিরিক্ত দামে। আমাদের তেল কেনার রশিদও দিচ্ছে না। ক্রয় রশিদ চাইলে আমাদের কাছে তেল বিক্রি করছে না আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, সয়াবিন তেল নিয়ে আমরা বেশি সমস্যায় আছি। ক্রেতারা চাইছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিনতে। আর আমাদের কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। গত এক সপ্তাহে সয়াবিন তেল বিক্রি করে আমার অনেক টাকা লোকসান হয়েছে।

নীলফামারী শহরের আব্দুল্লাহ নামে এক ক্রেতা বলেন, ৫ লিটার বোতলের তেল কিনতে শহরের বেশকটি মুদি দোকানে গিয়ে না পেয়ে দুই লিটারের দুটি বোতল কিনে বাড়ি যাচ্ছি।

হরিদাশ রায় নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বেশকটি মুদি দোকানে গিয়েও ১ লিটারের বোতল না পেয়ে খোলা সয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বোতলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ায় দোকানিরা বোতলের তেল ঢেলে খোলা হিসেবে বিক্রি করছে।

একটি কোম্পানির বোতলজাত তেলের ডিলার হযরত বলেন, মিল থেকে তেল না আসায় বাজারে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার গোডাউনে ১ লিটার ও ৫ লিটার তেলের বোতল ১ সপ্তাহ আগেই শেষ হয়েছে।

নীলফামারী জেলা বাজার কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বাজারের তেলের দাম কিছুটা বেশি নিশ্চিত করে বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তাদের ১৮৫ টাকা কেজি দরে খোলা তেল কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনও এ বিষয়ে তদারকি করছে। আশা করি, দ্রুতই তেলের দাম কমে যাবে।

এমআরআর/জিকেএস