দেশজুড়ে

মুড়ি খাওয়ানোর কথা বলে শিশু অপহরণ, সন্ধান চান বাবা-মা

মুড়ি খাওয়ানোর কথা বলে শিশু অপহরণ, সন্ধান চান বাবা-মা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে মুড়ি খাওয়ানোর কথা বলে একটি শিশুকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও শিশুটির কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। এ ঘটনায় মামলা করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও শিশুটিকে উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তারাও কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে শিশুটির সন্ধান চেয়ে মানবন্ধন করেছে পরিবার। ভুক্তভোগী পরিবারটি ফতুল্লার রসূলপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

মানববন্ধনে অশ্রুভেজা চোখে শিশুটির মা শামীমা বেগম বলেন, সংসারের প্রথম মেয়ে সন্তান এসেছিল আমার। আদর করে তার নাম রেখেছিলাম তাসমিয়া ইসলাম। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব করা হয়নি। নানা অসুখ-বিসুখের কারণে ছয় বছর বয়সেই তাকে হারাতে হয়েছে। এরপর দুই ছেলে সন্তানের পর আবার আমার সংসারে একটি কন্যাশিশু আসে। মেয়ে আমার অনেক আদরের ছিল। যেই আমার শিশুকন্যাকে দেখতো সেই কোলে নিতে চাইতো। তার নাম ছিল রাইসা মনি। এই মেয়েটিকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ১৮ মাস বয়সেই তাকে হারিয়ে ফেলেছি। মেয়েটিকে আমার অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। সংসারে একমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে সবার আদরের ছিল সে। মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলার পর থেকেই আমার সংসার শূন্য হয়ে পড়েছে। আমি এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মেয়েকে হারিয়ে আমি অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। জানি না আমার মেয়েটি কোথায় আছে। কারও সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না। কারও সঙ্গে আমি কোনো অন্যায় আচরণ করিনি। আমার সঙ্গে কেন এমন হলো?

Advertisement

শামীমা বেগম আরও বলেন, আমি আমার মেয়ের সন্ধান চাই। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবো না। যে কোনো উপায়েই হোক আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। একজন নারীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। মুড়ি খাওয়ানোর কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে শিশুটির সিএনজিচালক বাবা ফাহাদুল ইসলাম বলেন, সিএনজি চালাতে গিয়ে আমার সঙ্গে ফতুল্লার পাগলা এলাকার বাসিন্দা মো. কাশেমের পরিচয় হয়। পরে তার সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর রিজিয়া নামে এক মেয়েকে কাশেম আমার কাছে নিয়ে এসে বলে মেয়েটি অসহায়। তাকে আপনার বাসায় কয়েকদিন থাকতে দিন। আমি তার কথায় বিশ্বাস করে মেয়েটিকে আশ্রয় দিই। কিন্তু এই মেয়েই আমার সর্বনাশ করবে সেটা জানা ছিল না।

তিনি বলেন, রিজিয়া কয়েকদিন আমার বাসায় থাকার কারণে আমার ছেলেমেয়েদের সে কোলে নেয়। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর বিকেলে আমার ছোট শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে বলে সে ঝালমুড়ি খেতে চাচ্ছে। ১০ টাকা দেন আমি তাকে ঝালমুড়ি খাইয়ে নিয়ে আসি। আর এই সুযোগে আমার শিশুকন্যাকে অপহরণ করে। এরপর থেকে আমার শিশুকন্যাসহ রিজিয়ার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। সেইসঙ্গে কাশেমও একেকসময় একেক কথা বলছে। আমি আমার শিশুকন্যার সন্ধান চাই।

মানববন্ধনে এসে দাঁড়িয়েছিল শিশুটির দুইভাই হাসান ও রিয়াদ। তারাও বোনের সন্ধান চায়। ছোট বোনকে তারা কাছে পেতে চান।

Advertisement

শিশুটির নানি অনুফা বেগম বলেন, আমি আমার নাতনিকে ফেরতে পেতে চাই। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমার নাতনিকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

খালা ইফতি বলেন, এই অবুঝ শিশুটি কোনো দোষ করেনি। তাকে কেন মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন তার মায়ের কোল থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?

এদিকে, এই ঘটনায় ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। সেই মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

নারায়ণগঞ্জের পিবিআই পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান সরকার বলেন, প্রথম মামলাটি ফতুল্লা থানায় করা হয়েছিল। তারা অনেকদিন তদন্ত করছে। এরপর মামলাটি পিবিআইতে আসে। পিবিআইতে আমাদের সাব ইন্সপেক্টর টিপু সুলতান নামে একজন তদন্ত করেছিল। তিনি এখন ট্রেনিংয়ে আছেন। যার কারণে আমি এখন মামলাটি তদন্ত করছি।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অনেকদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো পজিটিভ কোনো রেজাল্ট পাইনি।

   

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমআরআর/জেআইএম