পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ওজন কারচুপির ঘটনায় আমদানি-রপ্তানিতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে আমদানি-রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীসহ বন্দর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেও কোনো সুরাহা হয়নি।
শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্দরে বৈঠক চলছিল। বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন মোবাইলে জানান, বন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এ অচলাবস্থা কাটবে না। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন।
এদিকে গত ১৩ জুন ওজন কারচুপির ঘটনা ধরা পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এরপর স্থলবন্দরের দুই ওজন পরিমাপকারীকে (স্কেলম্যান) বরখাস্ত করা হয়। তবে এ ওজন কারচুপিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। তাকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের নেতারা। এ ঘটনায় বন্দরের উভয় পাশে কয়েকশ পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানিকৃত পণ্য দুটি ওজন স্কেলে পরিমাপ করা হয়। এসব স্কেলে (ওজন পরিমাপ যন্ত্র) কারচুপির মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্যের ওজন বেশি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বন্দরের একটি চক্র ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে কম ওজনে পণ্য এনে বাংলাবান্ধায় বেশি পরিমাণ বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন। এতে স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি কারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি এ কারচুপি ধরা পড়ার পর স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে এ অচলাবস্থা দেখা দেয়।
ভারতের আসাম থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক আব্দুল মোতালেব বলেন, বন্দরের ওজন পরিমাপ যন্ত্রে ট্রাক ওজন দিয়েছি। পরিমাপে পণ্যের ওজন কম আছে জানিয়ে সেখানকার স্কেলম্যান ৩০০ টাকা দাবি করেন। ১০০ টাকা দিয়ে মাপ ঠিক করে নিয়েছি।
স্থল বন্দরের কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক সময় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্য ওজনে কম হলে আমাদের ওপর দোষ চাপায়। এখন তারা ধরা পড়েছে।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক মো. সাইদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থলবন্দরে পরিমাপ করা আমদানি পণ্যের ওজন পরে কম হতো। স্কেলম্যানকে দুই-একশ টাকা দিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে আমাদের কাগজ দিতেন। এতে আমরা প্রতি গাড়িতে ১৪-১৫ হাজার টাকার পণ্য কম পেতাম।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক আবুল কালম আজাদ বলেন, কারচুপির ঘটনায় দুই ওজন পরিমাপকারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনায় সজাগ থাকার কথা বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে।
সফিকুল আলম/আরএইচ/এএসএম