ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগের চিকায় পাল্টে গেছে চবির হলের নাম

প্রথম দেখায় মনে হবে হলটির নাম ‘বিজয়’ হল। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এ হলটির দাপ্তরিক নাম ‘এ এফ রহমান’। এমন বিভ্রান্তির যৌক্তিক কারণও আছে। চবি ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতির প্রভাবে জর্জরিত হলটি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ ‘বিজয়’-এর চিকার আধিক্যের কারণে হলটি এখন চেনা নাম হারাতে বসেছে।

এ এফ রহমান হল ছাড়াও চবির বাকি হলগুলো তো বটেই, অনুষদ ভবন, ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিনগুলোতেও দেখা মেলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপের নাম ও স্লোগান সম্বলিত চিকা। তবে এ এফ রহমান হলের চিত্রটি অন্য হলের তুলনায় ভিন্ন। হলটির পুরো দেওয়ালজুড়ে চিকা মারার ফলে এটির আসল রূপই পাল্টে গেছে।

বছরের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপগুলো গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও ভবনের দেওয়ালে চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন উপ-গ্রুপের কর্মীরা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় চিকা মারার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। নতুন শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে দলে ভেড়ানোই যার মূল উদ্দেশ্য।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, প্রথমদিন এসে ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চবিতেও বিজয় ৭১ হল রয়েছে। পরে জানতে পারি এখানে ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ গ্রুপের অনুসারীরা থাকে বলেই হলটির চিত্র এমন।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফ উদ্দিন রুহান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় আবাসিক হলে ঢুকতেই ভয় লাগে। পড়াশোনার চেয়ে এখানে রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর চর্চাই বেশি হয়। হলগুলোতে একবার ঘুরে আসলেই বোঝা যায় এখানে কোন গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি মারামারি লাগলো!

বিজয় গ্রুপের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চবিতে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নই, তবুও হলগুলোর দেওয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। এটা শুধু আমাদের গ্রুপ না, প্রত্যেক গ্রুপের কর্মীরা করে থাকে। যদি এ এফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। আমরা সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে।

চবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগিভিত্তিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন করতে পারি না।

এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, বছরখানেক আগে আমরা যখন পুরো হলটি পরিষ্কার করলাম, এর পরদিনই হলের দেওয়ালে চিকাগুলো মারা হয়েছে। যেহেতু এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর চিকা মারা হয়েছে, তাই ছাত্রনেতাদেরও বিষয়টি দেখা উচিত। এছাড়া আমি একা চাইলে হবে না, চিকা অপসারণে প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। সর্বোপরি হলের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ছাত্রদের সবসময়ই চিকা মারতে নিরুৎসাহিত করি। এগুলো হলের সৌন্দর্য নষ্ট করে। হলে চিকা মারার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব হল প্রশাসনের।

রোকনুজ্জামান/এমআরআর/জিকেএস