পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রাণনাশের হুমকিতে জীবন বাঁচাতে পাড়া ছেড়েছে বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় বসবাসরত পাঁচ পরিবার। পরিবারগুলোতে মোট ১৮ জন সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার (১ জুলাই) রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের পাংপুরি পাড়া ছেড়ে আসা অলক তঞ্চঙ্গ্যা (ছদ্মনাম) জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
অলক তঞ্চঙ্গ্যার ভাষ্যমতে, বুধবার (২৯ জুন) সকালে ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী পাড়ায় এসে অস্ত্র ঠেকিয়ে এদিকের খবর কাউকে না বলার জন্য বলেন এবং প্রাণে বাঁচতে চাইলে পাড়া ছেড়ে চলে যেতে বলেন। তাই পাড়ার সবাই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন ৩০ একর জমির উঠতি ফসল, গতবছরের সঞ্চিত ৭০-৮০ আড়ি ধান, কয়েকশ মণ শুকনা হলুদ, ৩০০-৪০০ মণ আদা ফেলে প্রাণে বাঁচতে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় আত্মগোপন করেন। পাড়া ছাড়ার আগে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান বিশ্বনাথকে ফোনে বিষয়টি জানান। তবে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মাথায় করে বহন করতে হওয়ায় তিন বছরের শিশুরাও না খেয়ে সারাদিন হেঁটে (৩০ কিলোমিটারের পথ) রোয়াংছড়িতে পৌঁছায়। সেখান থেকে গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করি।’
‘গত ২১ জুন রাঙ্গামাটির বড়থলি এলাকার সাইজাম পাড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন নিহত ও দুই শিশু আহত হওয়ার ঘটনায় পাড়ার লোকজন রাঙ্গামাটির অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিলেও সুশীল তঞ্চঙ্গ্যার পরিবার তাদের পাংপুরি পাড়ায় চলে আসে। তাদের আশ্রয় দেওয়ায় হয়তো আমাদের এই দুরবস্থা হয়েছে’, যোগ করেন অলক তঞ্চঙ্গ্যা।
সন্ত্রাসীদের আতংকে রাঙ্গামাটির বিল পাড়ার ২৫-৩০ পরিবার, সাজাম পাড়ার ২৩ পরিবার, খাইগ্যছড়া পাড়ার ৮-১০ পরিবার ও সবশেষ বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের পাংপুরি পাড়ার পাঁচটি পরিবার প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ায় লোকশূন্য হয়ে পড়েছে ওই চারটি পাড়া।
এ বিষয়ে আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হুমকির কারনে পাংপুরি পাড়ার লোকজন পাড়া ছেড়ে চলে গেছে বলে শুনেছি। তবে পাড়া ছেড়ে চলে আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’
বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়ন চক্রবর্তী/এসআর/এএসএম