পঞ্চগড়ে একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডসেডিং। সীমাহীন এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে কদর বেড়েছে চার্জার ফ্যান এবং হাতপাখার। কিন্তু গত দুদিন ধরে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক শোরুম ও দোকান থেকে বৈদ্যুতিক চার্জার ফ্যান উধাও হয়ে গেছে। টাকা দিয়েও মিলছে না চার্জার ফ্যান। আর ৩০ থেকে ৪০ টাকার হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, নর্থ বেঙ্গল ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি. (নেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলার পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই দুই কোম্পানির মাধ্যমে জেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিন দিনে কমপক্ষে ৫৫ মেগাওয়াট এবং রাতে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে অর্ধেকেরও কম। এ জেলায় প্রতিদিন বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে দিনে ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট এবং রাতে ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। এজন্য এলাকা নির্ধারণ করে ক্রমান্বয়ে লোডসেডিং দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।
এদিকে লোডসেডিং ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা অতিরিক্ত টাকা দিয়েও বাজারে চার্জার ফ্যান কিনতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। সব ইলেক্ট্রনিক কোম্পানির চার্জার ফ্যান গত দুদিনেই উধাও হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী কোম্পানি চাহিদা অনুযায়ী চার্জার ফ্যান সরবরাহ করতে পারছে না।
একইভাবে চাহিদা বেড়েছে হাতপাখার। স্থানীয় বাজারে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার হাতপাখা। এর মধ্যে ৪০ টাকার তালপাখা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, বাঁশের তৈরি ৩০ টাকার হাতপাখা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় এবং কাপড়ের হাতপাখা এক থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ধাক্কামারা এলাকার বিদ্যুতের গ্রাহক রবিউল ইসলাম বলেন, দুই রাত থেকে ঘুমাতে পারিনি। বিদ্যুৎ আসে আর যায়। বাধ্য হয়ে একটি চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। কিন্তু বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে কোনো দোকানেই চার্জার ফ্যান পেলাম না। গত দুই দিনে নাকি সব শেষ হয়ে গেছে। এখন হাতপাখাই ভরসা।
কায়েতপাড়া এলাকার কলেজছাত্র আল আমিন বলেন, তীব্র গরম আর বিদ্যুতের লোডসেডিংয়ের কারণে ঘরে থাকতে পারি না। লেখাপড়া করতেও আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। বাজারে হাতপাখা কিনতে এসে দেখি দাম অনেক বেশি। ৩০-৪০ টাকার হাতপাখা ১০০ থেকে ১২০ টাকা চাচ্ছে। আমি ৪০ টাকা দামের একটি তালপাখা ১১০ টাকায় কিনেছি।
পঞ্চগড় নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, সারা দেশের মতো আমরাও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে রোটেশন করে বিভিন্ন এলাকায় লোডসেডিং করতে হচ্ছে। জেলায় বর্তমানে দিনে ৫৫ মেগাওয়াট এবং রাতে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে দিনে ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট এবং রাতে ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট।
বিভিন্ন কোম্পানির ইলেক্ট্রনিক পণ্যের পরিবেশক নাহিদ স্টোরের মালিক মো. রনি বলেন, এমন গরমে এমনিতেই বৈদ্যুতিক ফ্যানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এখন বিদ্যুতেরও চরম লোডসেডিং চলছে। এজন্য চার্জার ফ্যানের ব্যাপক চাহিদা। গত দুদিনে আমাদের সব চার্জার ফ্যান বিক্রি হয়ে গেছে। কোনো কোম্পানিই চার্জার ফ্যান সরবরাহ করতে পারছে না।
সফিকুল আলম/এফএ/এএসএম