জাতীয়

ভারত সীমান্ত দিয়ে এসেছে ২১২ রোহিঙ্গা: বিজিবি ডিজি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। এ পর্যন্ত ভারত থেকে দালালদের মাধ্যমে ৫১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ২১২ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও জানান তিনি।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেছেন, বিভিন্ন সময় বেশকিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে ভারত থেকে। দালালচক্রের তৎপরতা কিভাবে প্রতিহত করা যায় তা নিয়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিস্তারিত কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন ভারত সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা তাদের (বিএসএফকে) সীমান্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছি। এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে ৫২তম সীমান্ত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজিবি ডিজি বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, ৫১টি পরিবারের ২১২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর বাইরে হয়তো দুর্গম পথে আরও কিছু প্রবেশ করতে পারে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে বর্ডারে যেন অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে। বিএসএফ আশ্বস্ত করেছেন অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।

মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, আমরা উভয় (বিজিবি-বিএসএফ) সীমান্ত বাহিনী চেষ্টা করছি গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং করতে। আমরা যোগাযোগ ও যথাযোগ্য সময়ে তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে, আন্তঃসম্পর্কের উন্নতি এবং ফরমাল ও ইনফরমাল সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগী হতে আলোচনা করেছি।

সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে বক্তব্য কী ছিল, বিজিবিও কি সীমান্তে নিহত সবাইকে অপরাধী মনে করে- এমন প্রশ্নে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি কিভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারি, কীভাবে কমানো নয়, শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারি।

তিনি বলেন, সীমান্তে একটা হত্যা মানে শুধু একটা মানুষের মৃত্যু নয়, এতে নিহতের পুরো পরিবার ভোগে। এলাকার মানুষের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে যে পেশাদার সম্পর্ক, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব আমরা বিএসএফকে বুঝিয়েছি। তারাও বুঝেছেন। আমরা সব সমস্যা একীভূত করে ধীরে ধীরে সেগুলো শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চাই। আমাদের যে স্পিরিট সেটা কাজে লাগাতে পারলে তা সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী।

গত ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় পিলখানাস্থ বিজিবি সদরদপ্তরে চলছে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) যৌথ আলোচনার দলিল (Joint Record of Discussions-JRD) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচদিনব্যাপী (১৭-২১ জুলাই) ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন আজ শেষ হয়।

বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।

অন্যদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।

এতে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এ সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

এসময় বিএসএফ মহাপরিচালক তাকে এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি সীমান্তে বিভিন্ন অপরাধ, মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ ভারতীয় পার্শ্বে অনিষ্পন্ন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়াও দুপক্ষই সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়।

টিটি/এমকেআর/এএসএম