‘পরিবার নিয়ে নদীর পাশে সুখের নীড় গড়ে তুললেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নদীভাঙন। চোখের সামনেই নদী প্রতিনিয়তই গিলছে কষ্টের গড়া বতসভিটা। ঘোলা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে ভাঙনের মুখে পড়া কয়েকশ মানুষ।’
কথাগুলো জানালেন ৫০ বছর বয়সী জমিরুন নেছা। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিসকা গ্রামের বাসিন্দা। জন্মের পর থেকেই নদীপাড়েই বসবাস করে আসছেন। নিজের ঘরবাড়িও বৌলাই নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। শুধু তিনি নন তার মতো কয়েকশ পরিবার এখন নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীভাঙনের কবলে পড়ে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী দক্ষিণকুল ঝালহাটি, ফাজিলপুর, দক্ষিণ মাহতাবপুর, পিরোজপুর, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চিসকা, সীমানা, বীরনগর, ধুতমা, বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা, পাঠানপাড়া গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এরই মধ্যে অনেক বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক বসতভিটায় বড়-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ, গত পাচঁ বছরের বেশি সময় ধরে নদী ভাঙছে। বড় বড় নৌকা চলাচলে ঢেউয়ের আঘাতেও ভাঙন বাড়ছে। ভাঙনরোধে দায়িত্বশীলরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বার বার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বালিজুরী ইউনিয়নের ঝাল হাটি গ্রামের বাসিন্দা জনি দাস বলেন, ‘নদী ভাঙন রোধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ এরই মধ্যে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সন্তানদের নিয়ে অনেক মানুষ রাস্তায় বসবাস করছেন।’
বৌলাই নদীর পাড়ের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব মরলে এ দেশের কারও কিছু যায় আসে না। নদী ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও গরিব বলে আমাদের কথা কেউ শোনে না।’
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে নদীর তীরের মানুষগুলো ফিরে পাবে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন। সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই দ্রুত ভাঙনরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’
বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হবে অনেকে।’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শাসসুদ্দোহা জাগো নিউজকে বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জাগো নিউজকে বলেন, নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
লিপসন আহমেদ/এসজে/জেআইএম