আইনি জটিলতা শেষে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝালকাঠির গাবখান সেতুর ইজারার দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। স্থানীয় সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ আগামী টেন্ডার প্রক্রিয়ার আগ পর্যন্ত টোল আদায় করবে। বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় শান্তিপূর্ণভাবে ইজারা দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনস্থ গাবখান সেতুর টোল আদায়ে ইজারা নেয় মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স। করোনাকালে লকডাউন থাকায় কাঙিক্ষত টোল আদায় করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। সেই থেকে টোল আদায় বহাল রাখে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ আদালতে স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যান।
গত ৬ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করলে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের আইনানুযায়ী কোনো ক্ষতিপূরণের বিধান না থাকায় ওই স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করে নেন আদালত। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দিয়ে বুধবার দুপুর ১২টায় ইজারাদারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়ে টোল আদায় শুরু করে। এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসলাম ব্রাদার্স।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, গাবখান সেতুর ইজারাদার মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সের কাছ থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সের ইজারার মেয়াদ ছিল। তখনই তাদের ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারির দিকে আদালতে করোনাকালে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের ব্রিজ এবং ফেরির টোল আদায়ে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে ধারায় উল্লেখ রয়েছে। তাই আমরা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসেই নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। আদালতে আবেদনের পূর্ব পর্যন্ত পাঁচটি টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। ওই সময়ে আদালত একটি স্থগিতাদেশ দেন যে, আপতত নতুন করে কোনো টোল আহ্বান করা যাবে না। বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম ব্রাদার্স টোল আদায়কারী হিসেবে বহাল থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক আপিল করে আইনি লড়াই শুরু করি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আপিল পরিচালনা করেছিলাম। নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতা শেষে গত ৬ জুলাই আদালত নির্দেশনা দেন যে, গত বছর আদালতের স্থগিতাদেশের যে নির্দেশনা দেওয়া ছিলো তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের টোল আদায়ের নীতিমালা অনুসরণ করে এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্দেশনা পাওয়ার পরে যাতে বুঝে নেওয়ায় কোনো বাধা না থাকে সেজন্য আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র দিয়ে বুধবার বুঝে নিতে সক্ষম হয়েছি।
মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সের পক্ষে টিটু তালুকদার বলেন, করোনা মহামারিতে লকডাউন থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। ইজারার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরেও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী টোল আদায় করছি। যখন পরবর্তীকালে স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করে নেন তখন আমরাও আইন এবং আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে এরই মধ্যে আপিল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আতিকুর রহমান/এমআরআর/জিকেএস