শেরপুরের শ্রীবরদীতে মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ করেছেন শিশুটির বাবা আমিন মিয়া। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের চরহাবর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, আমিন মিয়ার পরিবারের অভিযোগ- এ ঘটনায় মামলা করতে গেলেও অভিযোগ নেয়নি শ্রীবরদী থানা পুলিশ। মামলা না নিয়ে বরং তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে ফোন করা হলে শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শিশুটির বাবা একজন ফাজিল ছেলে। সে তিন বছর তাদের কোনো খোঁজ-খবর না নিয়ে এখন আসছে মায়া কান্না করতে।’
মামলা কেন নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চাকরি চলে গেলেও ফাজিলের বিষয়ে কোনো কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। আপনার (সাংবাদিকের) সময় অনেক, আপনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন। আমার সময় নেই, আমি কথা বলতে চাই না। পারলে আপনারা তদন্ত করেন গিয়ে।’
স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছর আগে ভেলুয়া ইউনিয়নের নুরু মিয়ার ছেলে আমিন মিয়ার সঙ্গে একই এলাকার ইছাহাক আলীর মেয়ে রত্না আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য কলহ চলছিল। গত প্রায় তিন বছর আগে আমিন মিয়া কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। পরবর্তীকালে সেখানে আরও একটি বিয়ে করার সন্দেহে দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার স্থানীয়দের নিয়ে সালিশও হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে রত্না আক্তার তার মায়ের বাড়ি চলে যান। আমিনের মা রত্নাকে আনতে গেলে তিনি না এসে তাকে অপমান করে পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ বিষয়ে ফের বৈঠকের আয়োজন করলে আমিন মিয়ার পরিবার অনুপস্থিত ছিল।
এদিকে, শুক্রবার রাতে রত্না আক্তারের বাবার বাড়িতে গোয়াল ঘরে দেওয়া ধোঁয়া থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে গোয়াল ঘরসহ দুইটি বসত ঘর পুড়ে যায়। পরবর্তীতে গোয়াল ঘরে তাদের চার বছরের শিশু ইসমাঈলের মরদেহ পাওয়া যায়। তবে শিশুটির বাবা আমিন মিয়ার অভিযোগ, দাম্পত্য কলহের কারণে তালাকের পর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এজন্য শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছেন মা রত্না আক্তার।
শুক্রবার রাতে শ্রীবরদী থানা চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে আমিন মিয়া বলেন, এক লাখ টাকা দেনমোহরে রত্নাকে বিয়ে করলেও কিছুদিন আগে রত্নার পরিবার এবং এলাকাবাসীর চাপে নতুন করে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধরা হয়েছে। তারপর থেকে রত্না ও তার পরিবার তাকে ডিভোর্সের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
আমিন মিয়ার বাবা নুরু মিয়া (শিশুটির দাদা) বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে তালাকের পর যাতে কোনো ঝামেলা না হয়, এজন্য আমার নাতিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাদের বাড়িতে আমার নাতি মারা গেছে, আমরা থানায় আসছি, কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। আমরা অশিক্ষিত মানুষ, কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছি না। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রত্না বলেন, ভয় পেয়ে গোয়াল ঘরে পালানোর কারণেই মৃত্যু হয়েছে ইসমাইলের।
এ বিষয়ে ৭নং ভেলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বলেন, তাদের পারিবারিক কলহের জেরে কয়েক দফায় সালিশ করতে হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দুইপক্ষকেই আসতে বলেছিলাম। বিকেল ৪টার মধ্যে ছেলে পক্ষ না আসায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি ইউএনও অফিসে চলে যাই। পরে রাতে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পরে শুনি মেয়ের বাড়িতে আগুন লেগে তাদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, শ্রীবরদী থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস শিশুর বাবার মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিশুর মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় দীর্ঘদিন ধরেই মা ও শিশুর খোঁজ রাখেনি। এখন সে ভিন্ন মতলবেও হত্যার অভিযোগ তুলে থাকতে পারে।
ইমরান হাসান রাব্বী/এমআরআর/জেআইএম