শিক্ষা

স্কুল-কলেজে প্রশ্ন প্রণয়নে মডারেশন কমিটি গঠনের সুপারিশ

স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ প্রশ্ন প্রণয়নে মডারেশন কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে প্রশ্ন কতটা কঠিন তা যাচাইয়ের পাশাপাশি বোর্ডের নিয়ম সামনে রেখে প্রশ্নপত্র তৈরি করা যায়। সম্প্রতি রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছিল। এমনই কঠিন করা হয়েছিল যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের পক্ষে তা তাৎক্ষণিক সমাধান প্রায় সম্ভব হয়নি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির দুই শাখার মোট ১০৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করে ৪০ জন। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হতাশাজনক ফলের পরও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমগীরের কাছে জমা হয়। দুই-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক আজমগীর জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে, প্রতিবেদন তৈরির কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। কমিটি একাধিক দিন সরেজমিন তদন্ত করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। আমাদের তদন্তে সার্বিক সব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যাতে এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অন্যান্য স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এজন্য একটু দেরি হচ্ছে।

তবে দুই-একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা কমিটি তাকে জানিয়েছে। প্রতিবেদনটি হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট ছাত্রী ফাইহা আত্মহত্যা করে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি সংস্থা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। অপর দুটি সংস্থা হচ্ছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কমিটি দুটি এরইমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

ডিআইএর তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের কোনো প্রমাণ তারা পাননি। তারা যে খাতা জব্দ করেছেন সেখানেও ফেল করিয়ে দেওয়ার কোনো নিদর্শন পাননি। বরং খাতা যথাযথভাবেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মূল্যায়ন করেছেন। তবে কমিটির পর্যবেক্ষণে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে।

এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজের সেকশনের ১০-১১ ছাত্রীকে কোচিং করান। প্রতিষ্ঠানটিতে নবম শ্রেণিতে যিনি যেই বিষয়ে পাঠদান করেন, দশম শ্রেণিতেও তিনি সেই বিষয়ে পাঠদান করান। এখানে ধারাবাহিকতা রক্ষার মতো ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচক দিক হচ্ছে, ছাত্রীদের জিম্মি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ৫২ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। কিন্তু তাদের মানোন্নয়নে ‘মেইকআপ’ ক্লাসের কোনো ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

আবার উচ্চতর গণিত বিষয়ের প্রশ্ন প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক উভয় পরীক্ষায়ই খুবই কঠিন হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো শিক্ষকেরও সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন তদন্ত কমিটির। কেননা, প্রশ্নপত্র প্রণয়নে শিক্ষা বোর্ডগুলোর নিয়ম আছে। তাতে কিছু প্রশ্ন সবধরনের শিক্ষার্থীর উত্তর করার মতো থাকে। আর কিছু প্রশ্ন থাকে মধ্যম ও অতি ভালোমানের ছাত্রছাত্রীর উপযোগী। কিন্তু উভয় পরীক্ষার প্রশ্নই এমন কঠিন হয়েছে যে, করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে দীর্ঘদিন ছাত্রীরা সরাসরি পাঠদানের বাইরে ছিল, সেখানে এই প্রশ্নপত্র যৌক্তিকতাও দেখছে না তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটিতে ফেল ও পাসকরা শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আলাদা দিনে তলব করার ব্যবস্থা আছে। এরপরিবর্তে একইদিনে অভিভাবক মিটিং করা হলে ছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিক চাপ কম পড়ার সুযোগ থাকে বলে মনে করে কমিটি।

কমিটির সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১২ সালের কোচিং নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষায় যারা ফেল করবে তাদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ না করা যাতে তাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে। সব প্রতিষ্ঠানে স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে দুজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে মনো-সামাজিক পরামর্শ দেওয়ার উপযোগী করা, যারা ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সিলরের ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানে একজন করে পূর্ণকালীন মনস্তত্ববিদ নিয়োগ করা।

এমএইচএম/কেএসআর/জেআইএম