অর্থনীতি

নাসির উদ্দিন: এক স্বপ্নজয়ী উদ্যোক্তার বিদায়

স্বপ্নসিঁড়িতে পা রেখেছিলেন যৌবনে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় আকাশছোঁয়া স্বপ্ন এনেছিলেন হাতের মুঠোয়। যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। কর্ম, নিষ্ঠা আর সততায় জীবনকে জয়ের যার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত নাসির উদ্দিন বিশ্বাস।

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন আজ চিরবিদায় নিয়েছেন। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান

তামাকজাত পণ্য থেকে বিড়িশিল্প। এরপর গ্লাস, ফুটওয়্যার ও প্লাস্টিকের বিশাল শিল্প। কুটির শিল্পকে কীভাবে বৃহৎ শিল্পে রূপ দেওয়া যায়, তার পথপ্রদর্শক ছিলেন স্বপ্নজয়ী নাসির উদ্দিন বিশ্বাস।

১৯৪৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার সোনাইকুন্ডি গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন এই শিল্পপতি। পিতা ইদ্রিস আলী ও মাতা মোছা. রহিমা বেগম।

১৯৬৭ সালে হোগলবাড়ীয়া মাধমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৭১ সালে একই কলেজ থেকে বি কম পাস করেন।

১৯৭১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে নাসির উদ্দিন ছিলেন দ্বিতীয়। কৃষিকাজের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু।

কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৬ সালে নাসির বিড়ি ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। ১৯৭৭ সালে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরীতে নর্থবেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ মেলামাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ১৯৯৬ সালে নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, ২০০০ সালে রিড্রাইং প্ল্যান্ট ও বিশ্বাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজেস লিমিটেড এবং ২০০২ সালে নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে মোট ৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

জনহিতকর কাজের মধ্যে ১৯৮৮ সালে আল্লারদরগা নাসিরউদ্দিন গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং ২০০২ সালে তাহা কলেজে উন্নীত করেন। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর কুষ্টিয়ার ১০০ জন করে শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করছেন নিয়মিত। ১৯৯১ সালে স্ত্রীর নামে আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করেন।

১৯৯২ সালে মায়ের নামে রহিমা বেগম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে অন্ধত্ব মোচনের জন্য নিজ অর্থায়নে কাজ করেন।

১৯৯৪ সালে দৌলুতপুর থানার বাড়াগাংদিয়াতে (বড়গাংদিয়া) নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

বিশেষ করে দৌলতপুরে আল্লারদরগাকে একটি শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০২ সাল থেকে দৌলতপুর থানার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিজস্ব অর্থায়নে ১৪টি ইউনিয়নে ১৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করেন।

শিল্পপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যেমন হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পেরেছেন, তেমনি দেশের রাজস্ব আয়ে দশকের পর দশক ধরে অবদান রাখতে পেরেছেন এই উদ্যোক্তা।

এএসএস/ইএ/এমএস