দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী। বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে দখলে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি। দখলকৃত জমিতে কেউ নির্মাণ করেছে বিশাল অট্টালিকা। আবার কেউ দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন ভাড়া। অনেকেই মাটি ভরাট করে প্লট বিক্রির মাধ্যমে করছেন রমরমা ব্যবসা। দখলের এ প্রতিযোগিতায় রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরকে অকাল বন্যার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে হবিগঞ্জবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী প্রমত্তা এ খোয়াই নদীর গতিপথ ১৯৭৮ সালে পরিবর্তন করা হয়। মাছুলিয়া থেকে রামপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা নদী কেটে শহরের বাইরে দিয়ে নেওয়া হয়। খোয়াই নদীর এ পাঁচ কিলোমিটার অংশ লুপ কাটিংয়ের আগে নদীর প্রস্থ ছিল স্থান ভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট এবং গভীরতা ছিল ২৫ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত। স্বেচ্ছাশ্রমে নদী কাটায় সে সময় অংশ নেয় কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে লুপ কাটিংয়ের পর শহরের ভেতরের অংশের নদীর পাঁচ কিলোমিটার (প্রায় ৭১ একর জায়গা) এলাকা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
শহরের পুরানমুন্সেফি এলাকার বাসিন্দা পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সদস্য আহসানুল হক সুজা বলেন, গতিপথ পরিবর্তন করা হলেও জেলার শহরের অর্ধেক অংশেরই পানি নিষ্কশন হতো পুরাতন এ খোয়াই নদীতে। ৯০ এর দশকে নদীটি দখল হওয়ায় শুরু হয়। ফলে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এখন সামন্য বৃষ্টিতে শহর তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পাশাপাশি নানা সমস্যা দেখা দেয়।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই নদীটি দখল ও দুষণমুক্তের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে উচ্ছেদ অভিযান হলেও অদৃশ্য কারণে তা বার বার বন্ধ হয়ে যায়-বলেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, এখন অনেক অংশেই নদীর চিহ্নও নেই। নদীর বিভিন্ন অংশ দখল, ভরাট আর দূষণের শিকার হয়েছে। বর্তমানে পুরাতন খোয়াই নদী হবিগঞ্জ শহরের সর্ববৃহৎ ডাস্টবিনে রূপ নিয়েছে। নদীর আশপাশের বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। নিজেদের রক্ষায় পুরাতন খোয়াই রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নদীর দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। কিছু অংশ উচ্ছেদের পরই বদলি হন তিনি। তার বদলির সঙ্গে থেমে যায় উচ্ছেদ অভিযানও। সম্প্রতি ফের নদীটি দখল হতে শুরু করেছে। শুধু দখলই নয়, ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর অস্তিত্ব সংকটে ফেলা হয়েছে। হারিয়ে যেতে চলেছে এর শেষ চিহ্নটুকুও।
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত কাজ। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উল্টোপাশে অর্ধ কিলোমিটার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে করা হচ্ছে। বাকিটাও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে। কোনো দখলদারই ছাড় পাবে না।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএইচ/জেআইএম