আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে খুলনা জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে জেলা বিএনপির সম্মেলন শেষ হলে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্মেলন শেষ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, দলীয় মনোনয়ন পেতে এসব ইউনিয়নের প্রায় দুইশত প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে নির্বাচিত ৩০ জনের মধ্যে ২১ জন ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন। বাকি ৯ জন দলীয় মনোনয়ন চাননি। এদের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে ছয় চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা এরই মধ্যে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তবে এবারের নির্বাচনে দলের ত্যাগী ও সাহসী নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানা গেছে। ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হলেই হবে না, দল যাদের ওপর নিরাপদ, ত্যাগী ও জনসমর্থন রয়েছে, এমন নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। থাকবে নতুন ও পুরনোর সমন্বয়, এমনটাই জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।দলীয় সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্চে। এ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নে দলীয় প্রতীকে জেলা ও নগর বিএনপির ১৯৩ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আবেদন করেছেন। এরই মধ্যে এসব প্রার্থীর যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে, শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। অন্যদিকে, গত ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও বিএনপি সমর্থিত ৩০ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে এর মধ্যে ৯ জন চেয়ারম্যান এবার আবেদন করেননি। এদের মধ্যে দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ গাইন ও পানখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিকদার সোহরাব হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর চারজন চেয়ারম্যান দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তারা হলেন, তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়নের দ্বীন মোহাম্মদ, বটিয়াঘাটা উপজেলার ভাণ্ডারকোট ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেন মোল্লা বাবু, পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুরের কাজী আবদুস সালাম বাচ্চু ও চাঁদখালী ইউনিয়নের মুনছুর আলী গাজী। এছাড়া পাইকগাছার লস্কারের চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। আর বটিয়াঘাটার সুরখালী ইউনিয়নে শেখ হেমায়েত আলী ও ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমান এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মনোনয়নের জন্য এখনো পর্যন্ত আবেদন করেননি। বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, রূপসা উপজেলার আইচগাতীর চেয়ারম্যান খান জুলফিকার আলী জুল ও শ্রীফলতলার চেয়ারম্যান এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী, দিঘলিয়ার যোগীপোলের চেয়ারম্যান মীর কায়সেদ আলী, ফুলতলা সদরের চেয়ারম্যান আবুল বাশার ও দামোদরের চেয়ারম্যান জাকিয়া হাসিন বীনা, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা মোশারেফ হোসেন মফিজ, মাগুরাঘোনার চেয়ারম্যান আবুল কালাম সামসুদ্দীন, ভান্ডারপাড়ার চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মোল্লা, সাহসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহাবুর রহমান, রুদাঘরার চেয়ারম্যান জিএম আমানুল্লাহ, খর্ণিয়ার শেখ দিদারুল হোসেন দিদার, আটলিয়ার চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান তসলিম ও রঘুনাথপুরের চেয়ারম্যান গাজী তফসির আহম্মেদ, বটিয়াঘাটার আমিরপুরের চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম খান জনি, গঙ্গারামপুরের চেয়ারম্যান গনি বিশ্বাস, বলিয়াডাঙ্গার চেয়ারম্যান মো. গোলাম হাসান শেখ ও জলমার চেয়ারম্যান গফুর মোল্লা, পাইকগাছার কপিলমুনির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু ও সোলাদানার চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক, কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বেল্টু ও উত্তর বেদকাশীর চেয়ারম্যান সরদার মতিউর রহমান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও প্রার্থী যাচাই-বাছাই মনোনয়ন বোর্ডের আহ্বায়ক এড. এস এম শফিকুল আলম মনা জানান, আন্দোলন সংগ্রামে যারা ত্যাগী ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, এমন নেতা-কর্মীদের দলের মনোনয়নের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুইশ নেতাকর্মী দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে প্রার্থীকে মনোয়ন দেয়ার জন্য যাচাই-বাছাই চলছে। এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়নে প্রার্থী নির্ধারণের জন্য জেলা বিএনপির উদ্যোগে যাচাই-বাছাই কমিটিসহ বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পরই চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে।এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, মহানগরীর আওতায় যোগীপোল ও আড়ংঘাটা ইউনিয়নের প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর জন্য কমিটিও রয়েছে। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের জন্য যাদের ভূমিকা রয়েছে, ত্যাগী, জনসমর্থন রয়েছেন এমন নেতা-কর্মীদের মনোনয়ন দেয়া হবে।আলমগীর হান্নান/এআরএ/পিআর