জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় কাজিপুরের পূর্বাংশের সাধারণ মানুষদের নানা কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ অংশে নেই কোনো ভালো স্কুল-কলেজ, নেই কোনো ভালো চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, তাই প্রতিদিন ছুটতে হয় সরিষাবাড়ী উপজেলা সদরের দিকে। কিন্তু শিশুয়া নদীর কারণে যাতায়াতে তাদের প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শ্যালো নৌকায় শুকনো মৌসুমে এ নদী পার হতে সময় লাগে ৫-১০ মিনিট, বর্ষায় লাগে দ্বিগুণ। ওই সময় ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় এ নদী। তাই এলাকাবাসীর একটি সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতপোয়া ইউনিয়নের ৪ গ্রামসহ কাজিপুরের ৪টি ইউনিয়নের হাজার মানুষ নৌকায় পার হয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরিষাবাড়ী রেলস্টেশন, ব্যাংক, বাজার, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে যাচ্ছেন।
অথচ তাদের নদী পারাপারের জন্য ভরসা একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সেটির জন্য দুই পারের যাত্রীদের আবার অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ নৌকাতেই আবার ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও পারাপার হয়।
কথা হয় কাজিপুরের মনসুরনগর ইউনিয়ন হতে এ নদী পারাপার হতে আসা রহিম মিয়া, কামাল হোসেন, মনির হোসেনসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, শুকনো মৌসুমে তাও কোনোরকম পারাপার হওয়া যায়। কিন্তু বর্ষায় প্রচন্ড ভয় লাগে। তখন নদী থাকে উত্তাল। পারাপার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেয়া ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। জরুরি রোগী নিয়ে পারাপার হতে গিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
এছাড়াও কথা হয় চর সরিষাবাড়ী গ্রামের কৃষক রমজান আলী, বোরহান আলী, শাহীন মিয়াসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, বর্ষায় নদী স্বাভাবিকভাবেই প্রশস্ত হয়। প্রবল স্রোত থাকে। নদী পারাপারে সময়মতো নৌকা পাওয়া যায় না। তাই সময় মতো বাজারে তারা তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেতে পারেন না। এতে তাদের লোকসান গুনতে হয়।
সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের শিক্ষার্থী শাকিল মিয়া, স্বপন, রোকসানা জাগো নিউজকে বলেন, খেয়া না পেলে তাদের ক্লাসে পৌঁছাতে দেরি হয়। অনেক সময় তাদের রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শুকনো মৌসুমে পারাপার হতে সময় কম লাগলেও বর্ষায় বেশি সময় লাগে।
কাজিপুরের মনসুরনগর ইউনিয়নের এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান গোলজার বলেন, প্রমত্তা যমুনার কারণে কাজিপুর উপজেলা শহর থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। তাই নিত্যপ্রয়োজনে সবসময় তাদের সরিষাবাড়ীতে যেতে হয়। একটি সেতুর অভাবে তাদের দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই তিনি এ দুর্ভোগ লাঘবে একটি সেতুর দাবি জানান।
সাতপোয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, কৃষকদের জমি চাষ করতে সবসময় নদী পারাপার হয়ে ওপারে যেতে হয়। শুকনো মৌসুমে কোনোরকম পার হলেও বর্ষায় তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এ নদীর ওপর একটি সেতু হলে কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জাগো নিউজকে জানান।
সরিষাবাড়ী স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আগেই জেনেছি। এ নদীর ওপর একটি সেতুর খুবই প্রয়োজন। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি ব্রিজের চাহিদা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে এটার নাম রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. নাসিম উদ্দিন, জামালপুর/এমআরএম