দেশজুড়ে

মেহেরপুরে ভৈরব নদের গলার কাঁটা কচুরিপানা

মেহেরপুরের ভৈরব নদ কচুরিপানায় ভরে গেছে। এতে পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পরিবেশবিদরা বলছেন, পানি কমে শিকড় মাটিতে স্পর্শ করলে কচুরিপানা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

ভারতের গঙ্গার শাখা নদী জলাঙ্গি থেকে ভৈরবের উৎপত্তি। ভারতের নন্দনপুর সেতুর নিচ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই নদ। ভারত বহু বছর আগে রেগুলেটর তৈরি করে ভৈরবের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর স্লুইস গেট থেকে গাংনী উপজেলার কাথুলী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার মৃতপ্রায় ভৈরব নদ পুনঃখনন শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যা শেষ হয় ২০১৭ সালের শেষের দিকে। সে সময় ভৈরব নদ ফিরে পায় তার পূর্ণ যৌবন। খনন করা নদের অংশের দুই পাড়ের মানুষকে গোসল করা, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন সুবিধা নিতে দেখা গেছে। কিন্তু কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় এখন সব সুবিধা থেকেই বঞ্চিত এখানকার মানুষ।

ভৈরব নদের পাড়ের বাসিন্দা আহসানুল বলেন, খননের পর নদটি আবার খরস্রোতা হয়ে জেগে উঠেছিল। পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে গোসল, কাপড় ধোয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করছিলেন স্থানীয়রা। প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন দেখে মনে হবে পুরো নদজুড়ে সবুজে ঘেরা কোনো মাঠ। কোথাও পানির দেখা নেই। কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আরেক বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেখভালের অভাবে বছর না ঘুরতেই ভৈরব নদ কচুরিপানা ও দুপাশের মাটিধসে সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভৈরব নদ পুনঃখনন করা হয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। মেহেরপুর অংশে পুনঃখননের ২৯ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটারই কচুরিপানায় আচ্ছাদিত।

ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা বুড়িপোতা ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কচুরিপানা পচে পানি দূষিত হয়েছে। আগের মতো মাছ উৎপন্ন হচ্ছে না। কচুরিপানা না থাকলে এ নদ থেকে কোটি টাকার মাছ ধরা সম্ভব হতো।

ভৈরব পাড়ের গোভীপুর গ্রামের গৃহবধূ হালিমা খাতুন ও খাইরুন নেছা বলেন, ‘আগে ভৈরব নদে আমরা গোসল করতাম। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করতাম। এখন পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় গোসল করা ও কাপড় ধোয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান বলেন, ভৈরব নদের আরও প্রায় ৫৬ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে, যা চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশে যাবে। সেইসঙ্গে দুটি স্লুইস গেট তৈরি করা হবে। যাতে বর্ষায় পানি বৃদ্ধি পেলে অন্য মৌসুমের জন্য পানি ধরে রাখা যায়।

পরিবেশবিদ এনামুল আজিম জানান, শিকড় যতদিন ভাসমান থাকে ততদিন মোটামুটি বাড়তে থাকে এ উদ্ভিদটি। কিন্তু পানি কমে শিকড় মাটিতে স্পর্শ করলে বিকট আকার ধারণ করবে এবং পরিবেশ দূষিত করবে, যা জলজ উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর।

এ বিষয়ে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, কচুরিপানা অপসারণের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একটি জলযান কিনতে টেন্ডারের কাজ চলমান। জলযান কেনার পর খুব শিগগির কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু হবে।

আসিফ ইকবাল/এসআর/জিকেএস