দেশজুড়ে

৪১ বছর পর বাড়ি ফিরলেন একলিমা

৪১ বছর পর পাকিস্তানে সন্ধান মেলা একলিমা বেগম নিজ গ্রামে ফিরেছেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার তালার উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গ্রামের মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে পৌঁছান গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে একলিমা বেগম। এসময় পরিবারের সদস্যরাসহ গ্রামবাসী ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন একলিমা বেগম ও তার বড় ছেলে আশরাফ খানকে। খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন একলিমা বেগমসহ তার স্বজনরা।

এদিকে একলিমা বেগমের আগমন উপলক্ষে রঙিন কাগজ ও বেলুনে সেজেছে তাদের গঙ্গারামপুরের বাড়িটি। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা গ্রামবাসীর মাঝে। তার আগমনকে ঘিরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে সবার। সেই সঙ্গে তাকে একনজর দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছে বাড়িতে।

নিজ গ্রামে পৌঁছে একলিমা বেগম বলেন, এত বছর পর সবার কাছে এসে খুব ভালো লাগছে। এভাবে আবার সবার কাছে ফিরতে পারব কখনও ভাবিনি।

একলিমা বেগমের ভাইয়ের ছেলে জাকারিয়া ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বহু চেষ্টার পর ফুফুকে দেশে আনতে পেরে ভালো লাগছে। তারা ২৫ দিন এখানে থাকবেন। ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা তাদের ঘুরিয়ে দেখাবো।

একলিমা বেগমের বড় ছেলে আশরাফ খান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বাবা অনেক ছোট বেলায় মারা গেছে। মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। মায়ের এ ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে। এখন এখানকার সবাই আমাদের ওখানে যাবে, আমরা আসব।

স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন একলিমা বেগম। তিন ছেলে-মেয়ে রেখে ১৯৮১ সালের কোনো একদিন হারিয়ে যান। সে সময় পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি তার।

৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মেলে একলিমা বেগমের। একলিমার বয়স এখন ৬৫ বছর। তার কেবল মনে ছিল বাবা-মা-ভাইদের নাম আর তালার গঙ্গারামপুর গ্রামের কথা।

পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থানরত একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তার এ আকুতির কথা ভিডিও করে সেখানকার পরিবারের সন্তানেরা ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। তাদের করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকরিয়া শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো তার দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন এবং ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।

পরে যাবতীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন একলিমার পরিবার। যার সুবাদে নিজ গ্রামে ফিরতে পেরেছেন তিনি।

আহসানুর রহমান রাজীব/আরএইচ/জেআইএম