বন্যার আগাম বার্তা কিংবা আকাশে মেঘের গর্জনে জোয়ারে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিতে হয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাসিন্দা রূপবানের। তার মতো আরও ১১টি পরিবার ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরের পরে থেকেই খাপড়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পুনর্বাসন না হওয়ায় তাদের প্রতিটি রাত কাটে আতঙ্কে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে লতাচাপলী ইউনিয়নের নাউরীপাড়া গ্রামের খাপড়াভাঙ্গা নদীর ৪৮ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করে আসছিল পরিবারগুলো। সিডরে নদীরক্ষা বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। পরে এসব পরিবারকে বাইরের অংশে রেখে নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ঝুঁকিতে থেকে যায় তারা। কিন্তু বর্তমানে নতুন করে শুরু হয়েছে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ভাঙন। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী বহু পরিবারকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হলেও তারা পায়নি মাথাগোজার ঠাঁই। তাই বাধ্য হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধের পাশেই বসবাস করছেন তারা।
ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দা রূপবান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বন্যায় সব হারিয়ে কোনোমতে এখানে থাকছি। জোয়ারে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। বন্যা হলেতো সবশেষ। এখন পর্যন্ত একটু থাকার মতো জায়গা সরকার আমাদের করে দিতে পারেনি।’
নাউরীপাড়া গ্রামের আসমা বেগম বলেন, ‘কত মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম একটু পুনর্বাসন কেউ করে দিলো না। সরকারের কাছে জোর অনুরোধ আমাদের জন্য যেন একটু থাকার ব্যবস্থা করে।’
এদিকে উপজেলার বেশিরভাগ নদীরক্ষা বেড়িবাঁধই টেকসই না হওয়ায় প্রতি আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে বেশকয়েকটি গ্রাম তলিয়ে যায় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুবিধা অনুযায়ী খাস জমির অভাবে এ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে তাদের দ্রুত সরিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া যায়।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য জাগো নিউজকে বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকার এসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা হবে। আমরা ভূমিহীন মানুষের তালিকা করছি যাতে তারা মাথা গোজার ঠাঁই পায়।
এসজে/জিকেএস