রাজনীতি

কিশোরগঞ্জ জেলা আ.লীগের সম্মেলন শুক্রবার

আগামী শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ ১৯ বছর পর এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। তাই সম্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রাণচাঞ্চল্য চলছে। সম্মেলকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল সামিয়ানা।সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা আহম্মদ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, মির্জা আজমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ হবে বলে অশা করছেন আয়োজকরা।কে হচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক? এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ ১৯ ফেব্রুয়ারির দিকে। এদিকে তরুণদের মধ্য থেকে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে আশাবাদ নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সম্মেলন না হওয়ায় নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী অন্দোলন কিংবা তারও আগের ছাত্রনেতাদের স্থান হয়নি আওয়ামী লীগে। তাদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি উঠেছে।কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। এখন থেকে ১৯ বছর আগে শেষ হয়ে যায় ওই কমিটির মেয়াদ। সেবার সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন দলের সাবেক এমপি শামসুল হক গোলাপ মিয়া। ১৯৯৬ সালে আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট জাতীয় সংসদের ডিপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচা সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম। সেই থেকে শুরু। এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পিকার, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সর্বশেষ দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। আর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথমে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, পরে এলজিআরডি মন্ত্রী হন। দুই-দুইবার সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ।জেলা কমিটির শীর্ষ পদগুলো বছরের পর বছর খালি। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে দলের কার্যক্রম। ভারপ্রাপ্তদের মধ্যেও অনেকেই মারা গেছেন। ফলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ৬১ সদস্যের জেলা কমিটির সভাপতি, ৩ জন সহ-সভাপতি, ২ জন সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দুইজন কার্যকরী সদস্য মারা গেছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগে মারা গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দুই-দুইবার দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জে সম্মেলন করা যায়নি। এ নিয়ে দলের ভিতরে বাইরে ছিল নানা সমালোচনা। সম্মেলন না হওয়ায় দলে নতুন নেতৃত্ব বের হতে পারছে না।এ অবস্থায় দীর্ঘ দেড় যুগ পরে হলেও কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা সম্মেলন হচ্ছে। জেলার ১৩টি উপজেলা কমিটি হালনাগাদ করা যায়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি উপজেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে জেলা সম্মেলন করা হচ্ছে।তবে দীর্ঘ দিন পর সম্মেলন হচ্ছে তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। নতুন করে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের মধ্যে। সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা নতুন করে দলের নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাড. এম এ আফজাল এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. শাহ আজিজুল হক। সাধারণ সম্পাদক পদে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরীফ সাদী, জেলা যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বকুল ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের আহ্বায়ক অ্যাড. সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর নাম শোনা যাচ্ছে।জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল জানান, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে প্রায় সাড়ে তিন’শ কাউন্সিলর ও ডেলিগেড নির্বাচন করা হয়েছে। তারা দলের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন। স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে হবে কাউন্সিল। তবে ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সম্ভাবনা বেশি’ বলে মনে করেন তিনি।সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজে মুখে কিছু না বললেও তার পক্ষে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। থেমে নেই জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও আশফাকুল ইসলাম টিটুর মধ্যে একটা শীতল লড়াই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সবাই বলছেন, সম্মেলনে যে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে তাই মেনে নিবেন তারা।যুবনেতা সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করি তখন আমার বয়স ছিল ৩০। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি সাবেক ছাত্রনেতা। অমার মতো ৩০/৩২ আছেন যারা এখনও ছাত্রনেতা। আমরা কোন হাইব্রিড নেতা চাই না। যারা মাঠের নেতা ছিলেন, লড়াই সংগ্রাম করে দুর্দিনে দলকে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক এটাই চাই।’এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘সবার মতো আমারও প্রত্যাশা নতুন কমিটি তরুণদের নিয়ে গঠিত হবে।’ কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।জেলা যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, যারা দলের দুর্দিনে রক্ত, শ্রম-ঘাম-মেধা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে জেলা কমিটি গঠিত হবে বলেও আশা করেন তিনি।নূর মোহাম্মদ/এসএস/আরআইপি