নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছেন, সারাদেশে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে শুধুমাত্র যাত্রীবাহী সাতটি লঞ্চ দুর্ঘটনায় ২০৩ জন মানুষ মারা গেছেন। লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এর ফলে নৌ-দুর্ঘটনার হার আগের তুলনায় অনেক হ্রাস পাবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে দিলারা বেগমের (মহিলা আসন-২০) লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।নৌ-দুর্ঘটনা রোধে সরকারের গৃহীত ১০টি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী। পরিকল্পনাগুলো হলো। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সর্তকতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারসহ পোস্টার, ফেস্টুন এবং নদী বন্দর টার্মিনালে মেগাফোনের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরডব্লিউটিএ এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে; যারা প্রতিনিয়ত ঢাকা-বন্দরের টার্মিনালে অধিক যাত্রীবহন রোধসহ লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি এবং সার্ভে সনদ অনুযায়ী মাস্টার ও ড্রাইভার যথাযথ আছে কি না তা নিশ্চিত করে। এছাড়া ঈদ ও কালবৈশাখী মৌসুমে এ ধরনের টিমের কার্যক্রম বিশেষভাবে জোরদার করা হয়। পাশাপাশি কোনো লঞ্চ অধিক যাত্রী তুললে এবং জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকলে ওই লঞ্চের যাত্রা স্থগিত করাসহ নৌ-আদালতে মোকাদ্দমা দায়ের করা হয়ে থাকে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে সকল নৌ-পথে চলাচলকারী নৌযানে কর্মরত মাষ্টার, ড্রাইভার, সুকানী ও আনসারদের জন্য মাঝে মাঝে ঢাকা নদী বন্দরে নৌ-নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অন্যান্য বন্দরেও এরুপ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ফিটনেসবিহীন সকল লঞ্চ উপকূলীয় আংশিক অশান্ত নৌপথে চলাচল বন্ধ রাখা হবে।নৌ-নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে যাত্রী ও চালকদের পরামর্শ সম্বলিত নৌ-হুঁশিয়ারি লিফলেট কপি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নরসিংদী, ভৈরব, পাটুরিয়া ও আরিচা নদী বন্দরে বিলি করা হবে।দেশের বিভিন্ন নৌ-পথে নিরাপদ নৌ-চলাচলের স্বার্থে বিআইডব্লিউটিএ ইতোমধ্যে বয়া, বাতি, মার্কা, বিকনসহ পর্যাপ্ত নৌ- সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে মন্ত্রী দাবি করেন।নদীমাতৃক ৪৭টি জেলার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে অবৈধ যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিটি নদী বন্দরে লঞ্চে সহনীয় পর্যায়ে যাত্রী ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভয়েজ ডিক্লারেশন রেখে লঞ্চগুলোকে তার নিদিষ্ট সময়ের আগেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।প্রতিবছর দেশব্যাপী নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে।বিশেষ করে ঈদ, পূজা-পার্বন এবং ইজতেমাসহ বিশেষ দিনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন পরিহারের লক্ষ্যে প্রয়োজনে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়।মন্ত্রী বলেন, এই ১০টি কার্যাদি প্রতিপালন করার কারণে নৌ-দুর্ঘটনার হার আগের তুলনায় অনেক হ্রাস পাওয়ায় নৌ-পথে নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহনে সার্বিকভাবে সরকারের প্রায় শতভাগ সফলতা রয়েছে।এইচএস/এনএফ/পিআর