নীলফামারীতে কয়লা সংকটে নতুন ইট উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভাটা মালিকরা। এলসি (ঋণপত্র) জটিলতায় আমদানি না হওয়ায় বেড়েছে কয়লার দাম। টাকা দিয়েও কয়লা না পাওয়ার অভিযোগ ভাটা মালিকদের। এছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়ায় ইটের দামও বাড়ছে। এর চাপ পড়ছে ক্রেতাদের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ৬৪টি ভাটা আছে। যার সবকটির ইট উৎপাদন নির্ভর করে কয়লার ওপর। ইট পোড়ানোর মৌসুম অনেক আগেই শুরু হলেও কয়লা সংকটে এখনো বেশির ভাগ ভাটায় জ্বলেনি আগুন। একদিকে কয়লার দাম তিনগুণ বেড়েছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে দুগুণ। এতে ভাটা বন্ধের আশঙ্কা করছে অনেক মালিক।
ভাটা মালিকরা জানান, ২০২০-২১ মৌসুমে প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৯ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এবার তা কিনতে হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এতে উৎপাদনের পর খরচ বিবেচনায় প্রতি হাজার ইটের মূল্য নির্ধারণ করতে হিমসিম খাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। বেশি দাম নির্ধারণে লসের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কায় তারা। এরপরও কয়েকজন মালিক শুরু করেছে ইট উৎপাদন। সিংহভাগ ভাটা এখনো পায়নি কয়লা।
জলঢাকা খুটামারা এম এইচ ব্রিকসের মালিক মাহমুদার হোসেন বলেন, টাকার দেওয়ার অনেকদিন পর কয়লা পেয়েছি। আগে যে কয়লা কিনতাম ৯ হাজার তা এখন ৩০ হাজারের ওপরে। এমনি ইটের দাম বেশি। এরপর কত হবে বলা যাচ্ছে না। এছাড়া চাহিদার তুলনায় কয়লা পাচ্ছি না আমরা। জানি না ভবিষ্যৎ কী হবে। ঝুঁকি নিয়েও আগুন জ্বালিয়েছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
দুহুলী এন বি এল ভাটার স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাই বলেন, কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছে ডলার সংকটের কারণে তারা কয়লা আমদানি করতে পারছে না। এছাড়া এদিকে পরিবহন খরচও বেড়েছে। গত মৌসুম থেকে এবার কয়লার দাম বেড়েছে তিন গুণ। এমন অবস্থায় আমরা নতুন ইটের দাম নির্ধারণে হিমসিম খাচ্ছি। নতুন ইটের দাম নির্ধারণ করলে দেখা যাবে ১৫ হাজার টাকার বেশি হবে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর একটা প্রভাব তো পড়বেই। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো উন্নয়নেও প্রভাব পড়বে। তাতে আমাদের লসের ঝুঁকি আছে। সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত যেন এ কয়লা সংকট দূর করে।
টেংগনমারী এস বি এল ভাটা ম্যানেজার বলেন, কয়লা পাইনি আমরা। এখন ভাটায় আগুন জ্বালাবো কি-না সে নিয়ে চিন্তায় আছি। আগুন দিয়ে আবার কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ হবে তখন তো সমস্যা। আর ভাটা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখছি। সরকারের কাছে অনুরোধ বিষয়টি যেন দেখে। কারণ ভাটা বন্ধ হলে অনেকে কর্মসংস্থানও হারাবে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুরের কয়লা ব্যবসায়ী মেসার্স নুর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, আসলে আমদানিকারকরা বলছে যে এলসি না হওয়ায় কয়লা আনা সম্ভব না। দাম বাড়ার মূল কারণ আসলে ওটাই। এখন এখানে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা শুধু সাপ্লায়ার। আমদানিকারকদের থেকে আনি আর সেল করি। আমরাও এটার ভুক্তভোগী।
বাড়ির অর্ধেক কাজ শেষ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম। বাকি কাজের জন্য বাজারে গিয়েছিলেন ইট কিনতে। কিন্তু দাম শুনে তিনি হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
রহিদুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি ইট কিনেছিলাম দাম কম ছিল। এখন ইট কিনতে গেছি দাম বেশি। ৮ হাজারের ইট এখন ১৫ হাজার টাকা। বাড়ি অর্ধেক করেছি, বাকিটা আটকে আছে। ভাটায় জিজ্ঞেস করলে বলে কয়লার দাম বেশি আমরা কী করবো। এদিকে সিমেন্টের দাম বেশি। সব কিছুর দাম বাড়লে চাপ আসে সাধারণ মানুষের ওপর। এভাবে হলে কেমনে চলবে মানুষ।’
নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘সবার তো একটা স্বপ্ন থাকে পাকা বাড়িতে থাকার। যে ইটের দাম কেমন করে পাকা করবো। সব কিছুরই দাম বেশি। কেমনে চলবো আমরা।’
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি করছি টুকটাক কাজ বাকি আছে। দোকানের ঘর করবো। ইট কিনতে গিয়ে শুনি দাম বেশি। জিজ্ঞেস করলে কয়লার দাম বেশি। আমরা তো গরিম মানুষ। দাম যদি আগের মতো হলে ভালো হতো।
নীলফামারী ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, আসলে এ অবস্থায় আমরা সম্পূর্ণ বিপাকে পড়েছি। মাটিকাটা শ্রমিকসহ সব ধরনের খরচ বাড়ছে। কয়লা আগে ৯ হাজার থেকে ২২ হাজার পর্যন্ত কিনেছি এখন ৩১ হাজার টাকা। এখন এলসি না সিন্ডিকেট এটা আমরা বলতে পারছি না। এমন চলতে থাকলে এবারে সিংহভাগ ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে।
কয়লা সংকটে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নীলফামারীতে সবকটি কয়লা কেন্দ্রিক ভাটা। যেটা বাষ্পীয় সিস্টেমে চলে৷ এমন কোনো বিষয় নাই।
এসজে/এমএস