দেশজুড়ে

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চান দিনাজপুরের দুই ভাষাসৈনিক

দিনাজপুরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় কারাবরণকারী দুই ভাষাসৈনিক জীবিত রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সুস্থ থাকলেও অপরজন অসুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।এরা হলেন-শহরের কসবা এলাকার অ্যাড. দলিল উদ্দিন এবং পাহাড়পুর ইকবাল স্কুল মোড় এলাকার অ্যাড. মোতালেব হোসেন। এদের মধ্যে অ্যাড. মোতালেব হোসেন সে সময়ের কথা বলতে পারলেও অ্যাড. দলিল উদ্দিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক কিছুই এখন আর তিনি মনে রাখতে পারেন না। সরেজমিনে ভাষাসৈনিক এ্যাড. দলিল উদ্দিনের কসবাস্থ বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি পুরানো আমলের মাটির ঘরের বারান্দায় একটি চৌকির উপরে বসে আছেন। চোখের আলো ঠিক থাকলেও কানে ভাল শুনতে পান না। প্রকৃত জন্ম তারিখ জানা না থাকায় ১৯৫৩ সালে মেট্রিকুলেশন পাস সার্টিফিকেট বের করে দেখে ১৫ আগস্ট ১৯৩৬ সালে তার জন্ম তারিখ দেখান। তিনি বলেন, দিনাজপুর জিলা স্কুলে ১০ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তিনি গ্রেফতার হন। স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ায় জেলে যাওয়ার তারিখ কিংবা কতদিন জেলে ছিলেন তা জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে পারেননি।পড়ন্ত বেলায় এসে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই বলে জানালেন তিনি। অন্য ১০ জনের মতো তিনিও চান ভাষা সৈনিকদের তালিকা তৈরি হোক। দেয়া হোক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তিন কন্যা সন্তানের জনক এই ভাষাসৈনিকের অভাব না থাকলেও কিছুটা অনাদর আর অযত্নে আছেন। চলাফেরা বলতে হুইল চেয়ারে।অন্যদিকে, ভাষাসৈনিক অ্যাড. মোতালেব হোসেন ১৯৩২ সালের ১ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তবে সাটিফিকেটে জন্ম তারিখ ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তার পরিবাররি সদস্যরা সবাই স্ব স্ব নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠিত। তবে একমাত্র ছেলের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু তাকে আজও পীড়া দেয়।ভাষা আন্দোলন চলাকালে জেলে যাওয়ার কারণে তিনি সেবার মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংগ্রহণ করতে পানেননি। যার কারণে এক বছর পিছিয়ে যান তিনি। শারীরীকভাবে সুস্থ থাকায় তিনি এখনও নিয়মিত আদালতে যান। তিনি এক সময় পিপির দায়িত্বও পালন করেন।ভাষা আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম কমিটির দিনাজপুর জেলার আহ্বায়ক অ্যাড.মোতালেব হোসেনের বাড়িতে যখন যায় তখন তিনি আসরের নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজ শেষে কথা হয় এই ভাষাসৈনিকের সঙ্গে । তিনি জানালেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু সেই। তিনি কোন সম্মানি বা ভাতা চাননা। তবে তিনি চান ভাষা সৈনিক হিসাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। তিনি চান যারা ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের একটা তালিকা তৈরি করুক সরকার। মৃত্যুর পর যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। কারণ আর থেকে ২ দশক পর দেশের মানুষের কাছে ভাষা সৈনিকেরা গত হবে যাবেন।দুই ভাষাসৈনিক জনালেন, কেউ তাদের খবর রাখে না। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন অনুষ্ঠানেই তাদের ডাকা হয় না। সরকারিভাবে গঠিত ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটিতেও তাদের নাম রাখা হয় না।  তারা চান সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন ও ব্যবহার। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার না হওয়ার কোনো কারণ তাদের জানা নেই। তারা উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার দাবি করেন।এমদাদুল হক মিলন/এসএস/এমএস