দেশজুড়ে

কুয়াশায় পশ্চিমাঞ্চল রেলের শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীদের দুর্ভোগ

বৈরী আবহাওয়ায় পশ্চিমাঞ্চল রেলের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ট্রেন এক ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ফলে যাত্রীদের নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

টানা শৈত্য প্রবাহে উত্তরাঞ্চলে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়েছে ট্রেনে। ফলে ট্রেন গন্তব্য পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমাঞ্চল রেলে কর্মবিরতি ঘোষণার দেড়ঘণ্টা পর স্থগিত

রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাকশী রেলওয়ে বিভাগের অধীনে ৩৮টি আন্তঃনগর ট্রেন, ৩১টি মেইল ট্রেন ও ছয়টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। ঘন কুয়াশার জন্য বেশির ভাগ যাত্রীবাহী ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। এরমধ্যে ধুমকেতু এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটি, নীলসাগর এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টা, একতা এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা, রূপসা দুই ঘণ্টা, সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটসহ বেশিরভাগ ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা থেকে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। সময়সূচি অনুযায়ী এ ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি ১০টা ৩৫ মিনিটে। সকাল ১১টায় যাত্রীরা কনকনে বাতাসে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

স্টেশনে অপেক্ষারত ট্রেনযাত্রী ঈশ্বরদী মহিলা কলেজের প্রভাষক আব্দুল বাতেন জাগো নিউজকে জানান, একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করাতে রাজশাহীতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছি। ট্রেনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট সময় অতিক্রম করেছে তবুও ট্রেন আসছে না। স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে বসে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ এখনো জানাতে পারেনি ট্রেন কখন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করবে।

সাংস্কৃতিক সংগঠক আব্দুল আওয়াল রিজভী জাগো নিউজকে জানান, বেশ কয়েকদিন থেকেই দেখছি ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। আজো বেশ কয়েকটি ট্রেনে বিলম্বের কথা স্টেশন কর্তৃপক্ষ প্ল্যাটফর্মের মাইকের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে এসব ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। কুয়াশা ভেদ করে ট্রেনগুলো যেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে পারে সেজন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন। আশাকরি রেলওয়ে যাত্রী দুর্ভোগ নিরসনে এ শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ খোকন জাগো নিউজকে জানান, ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। ট্রেন কখন আসবে তা বলতে পারছি না। আমাদের মতো বহুযাত্রী কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বসে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন মাস্টার মো. তৌহিদ জানান, ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশনে ১২টা ৫০ মিনিটে যাত্রাবিরতি থাকলেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে ২টা ১০ মিনিটে স্টেশনে প্রবেশ করে। খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ৪৫ মিনিট, খুলনা থেকে চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ২৫ মিনিট, মহানন্দ ৩০ মিনিট দেরিতে স্টেশনে এসেছে। সাগরদাঁড়ি, মধুমতি, বেনাপোলসহ কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে।

ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের বুকিং সহকারী হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, এ রুটে চলাচলকারী উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন বাইপাস স্টেশনে সকাল সাড়ে ১০টায় যাত্রী বিরতি থাকলেও প্রায় ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়েছে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় অভিমুখী একতা এক্সপ্রেস ট্রেন ২টা ২৩ মিনিটে যাত্রা বিরতি থাকলেও এ ট্রেন প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে সাড়ে ৪টায় স্টেশনে আসে। একইভাবে এ রুটে চলাচলকারী লালনমনিহাট এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য ট্রেনগুলোকে বিলম্বে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে কর্মরত ট্রেন চালক (লোকো মাস্টার) জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ প্রতি শীতেই ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশনা দেয়। কুয়াশা ভেদ করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানোর কোনো প্রযুক্তি আমাদের জানা নেই।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান জানান, কুয়াশার কারণে যাত্রীবাহী বেশিরভাগ ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। প্রতিবছর ঘন কুয়াশার চালকরা হেডলাইট জ্বালিয়ে গতি কমিয়ে ট্রেন চালায়। কুয়াশা কমে গেলে ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে পারবে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমাঞ্চলে যুক্ত হচ্ছে ৪০ অত্যাধুনিক ইঞ্জিন লোকোমোটিভ

বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ ও ওয়াগন) মুনতাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কিছুটা কমানো হয়। কুয়াশা ভেদ করে ট্রেন দ্রুত গতিতে চালানোর কোনো প্রযুক্তি নেই। কুয়াশার জন্য ট্রেনের গতি কমানো ছাড়া আর উপায় থাকে না। ‘ফগ ডিভাইস’ সহ বিভিন্ন প্রযুক্তির কথা শুনা গেলেও কুয়াশার মধ্যে দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানো যায় এমন কোনো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কুয়াশার কারণে প্রতি বছর পাশের দেশ ভারতে বহু ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। আমাদের দেশে যাত্রাবাতিলের মতো ঘটনা না ঘটলেও ট্রেনের গতি কমিয়ে চালানো হচ্ছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার। ঘন কুয়াশার কারণে বেশি দুরত্বে চলাচলকারী ট্রেনগুলো কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। গত ২ জানুয়ারি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন ৮ ঘণ্টা বিলম্ব ছিল। ট্রেনে বিলম্বে চলাচল অনেকটা কমে এসেছে। কুয়াশা কমে গেলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

শেখ মহসীন/আরএইচ/জেআইএম