দেশজুড়ে

‘জীবনের ৬৫ বছরে মাঘ মাসে নদী ভাঙন দেখি নাই’

অসময়েও থেমে নেই যমুনার ভাঙন। তাই শুষ্ক মৌসুমেও নিশ্চিন্তে ঘুমানোর অবকাশ নেই নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। রাত জেগে পাহারায় থাকতে হয়, যদি ভাঙনের ভয়াল থাবা ভিটেমাটি সব কেড়ে নেয়! কিছুতেই যেন এই আতঙ্ক কাটে না তাদের।

এমন দৃশ্যপট সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে। যুগ যুগ ধরে এ ভাঙন চলমান। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন ভাঙছে কূলের মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে এখন যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে-ই ভুলে গেছেন এ এলাকার মানুষ। তবে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আক্ষেপ নদী পানি উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে নেই কোনো উদ্যোগ।

শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সরেজমিনে গেলে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই থেকে চরসলিমাবাদ ভূতের মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় আবারও শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের কবলে হুমকিতে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা, বাজার, ৫০টি বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।

আরও পড়ুন: চাঁদপুরে নদী ভাঙন, মন্দিরসহ ঘরবাড়ি বিলীনের আশঙ্কা

এখন হুমকির মুখে রয়েছে বিনাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সম্ভূদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্ভূদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পয়লা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, চৌবারিয়া বি এম কলেজ, বাঘুটিয়া কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও দেখা মেলেনি স্থায়ী বাঁধের।

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের জসিম উদ্দিন আক্ষেপ করে জাগো নিউজকে বলেন, অসময় যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তাদের সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় অনেক মানুষই ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

চরসলিমাবাদ গ্রামের সানোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার জীবনের ৬৫ বছর বয়সে মাঘ মাসে নদী ভাঙ্গে কখনো দেখি নাই। এখন ঘরবাড়ি নিয়ে কোথায় যাবো, বুঝতে পারছি না। আমাদের এলাকা বাঁধ দিয়ে রক্ষা করলে তাও নদীর পাড়ে থাকতে পারতাম।

জালালপুর গ্রামের হালিমুন বেগম জাগো নিউজকে জানান, তিনি আট বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। তার রেখে যাওয়া একটু জমি ও বসতভিটা ছিল। তাও এ বছর নদীতে ভেঙে গেছে। এখন অন্যের জমিতে ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করছেন। এখান থেকে কখন যে তুলে দেয় সেই আতঙ্কে দিন কাটছে তার।

আরও পড়ুন: ভাঙনের শব্দে দ্বীপজুড়ে হাহাকার

একই গ্রামের মকবুল শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে আমি ভাঙনের মুখে পড়েছি। বারবার ভাঙনে সবকিছু নদীতে চলে গেছে। এখন একটু জায়গা আছে তাতে ছেলেমেয়ে নিয়ে বাস করছি। কিন্তু এটাও ভাঙনের মুখে রয়েছে। বাঁধ নির্মাণের কথা শুনছি, কাজ তো দেখি না।

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, এ এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে সেটি গত বছরে সরকার অনুমোদন দিলেও আলোর মুখ দেখছে না। এতে আতঙ্কে আছে যমুনা পাড়ের মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (বেলকুচি-চৌহালী অঞ্চল) মো. মিলটন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এটি টেন্ডার শেষে ১৭টি প্যাকেজে ঠিকাদাররা কাজ পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: বগুড়ার যমুনা নদীতে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরসি কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার আকরাম হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ১১ নম্বর প্যাকেজের কাজটি তারা পেয়েছেন। অল্পদিনের মধ্যে ব্লক বানানোর কাজ শুরু করবেন।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ওই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের কাজ চলছে। বাকিগুলোর কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে।

এম এ মালেক/এমআরআর/জেআইএম