দেশজুড়ে

মিশ্রিপাড়ায় বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়

কুয়াকাটা সৈকতের মিশ্রিপাড়ায় বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা রাখাইন কৃষ্টি-কালচার দেখতে সেখানে ভিড় করছেন। সংগ্রহ করছেন তাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

স্থানীয়রা জানান, শত বছর আগে সৈকতের অদূরে গড়ে ওঠা রাখাইনপাড়া খ্যাত মিশ্রিপাড়া গড়ে ওঠে পাড়া প্রধান মিশ্রি চৌধুরীর নামে পাড়াটি নামকরণ করা হয়। সৈকতের পাশাপাশি এ পাড়ায় রাখাইনরা সেখানে দুই শতাধিক পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছেন। যার বদৌলতে প্রত্যন্ত গ্রামটি এখন রূপ নিচ্ছে বাণিজ্যিক এলাকা হিসাবে।

তারা জানান, দুইশো বছর আগে মায়ানমারের আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে সমুদ্রপথে পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জায়গায় এসে আশ্রয় নেয়রাখাইন পরিবারগুলো। এসব এলাকার পতিতজমিতে শুরু করেন আবাস্থল তৈরির কাজ। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের জনগোষ্ঠীর পরিধি।

আরও পড়ুন: সমুদ্রসৈকতসহ কুয়াকাটা ভ্রমণে দেখুন আরও ৮ স্পট

প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় চর্চা ও বসবাসের তাগিদে এক-এক স্থানে বসবাস করলেও গত ১০-১৫ বছর ধরে গ্রামটি হয়ে উঠেছে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের অন্যতম ভ্রমণ স্পট। পর্যটকদের আগমন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই গ্রামে উঠতে শুরু করে বাহারি কাপড়, শুঁটকি, আচার, ঝিনুক, শামুকসহ নানা ধরনের দোকান। প্রত্যন্ত গ্রামটি এখন বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।

আগত পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়াকাটা এসে ছোট্ট এ গ্রামের একটি মন্দির, রাখাইনদের কৃষ্টি কালচার পাশাপাশি বেশ বাহারি মার্কেটে সময় কাটাতে পেরে ভালো লাগছে। রাখাইন মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সুলভমূল্য কিনতে পেরে আমরা আনন্দিত।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নাহিদ রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটায় সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে আজ মিশ্রিপাড়া আসলাম। রাখাইনদের কালচার দেখছি বেশ ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন: কুয়াকাটা সৈকতেও দেখা মিলবে প্যারাসেইলিং

সেখানকার নাবিলা কাপড় হাউসের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, এটি এমন একটি গ্রাম ছিল যেখানে একটি চায়ের দোকান দিতে কেউ সাহস করতো না। সেখানে আমরা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছি। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সঙ্গে দোকানও বেড়ে চলছে। পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে পেরে আমরাও লাভবান হচ্ছি।

অংচান নামের এক রাখাইন কাপড় ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, এ মন্দির ছিল আমাদের এক সময়ের শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনালয়। এটাকে কেন্দ্র করে আমরা ব্যবসাবাণিজ্য প্রসার করছি। সঙ্গে পর্যটকদেরও বিনোদনের জায়গা বেড়েছে।

আরও পড়ুন: কুয়াকাটার কাছে সমুদ্রের মাঝে নতুন চর

মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উত্তম মাহাথ জাগো নিউজের বলেন, এ এলাকায় গত দুইশত বছরের বেশি সময় আগে রাখাইনরা আসে। তখন অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বসবাস শুরু করতে হয়। পরে ধর্মীয় প্রয়োজনে মন্দির তৈরি করা হলেও পরবর্তীতে পর্যটকদের জন্য এটা দর্শনীয় স্থান হিসাবে রূপ লাভ করে। যে কারণে স্থানীয় প্রত্যেকটা পেশার মানুষ লাভবান হচ্ছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জাগো নিউজকে বলেন, সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রাখাইন সম্প্রদায়ের গ্রামটির নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে রাখাইনদের বৌদ্ধ মন্দিরে স্থাপিত মূর্তিটি দেশের সবচেয়ে বড়। কুয়াকাটার পাশাপাশি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে এ গ্রামটি।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/আরএইচ/জেআইএম