ক্যাম্পাস

অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালে, ক্ষতিপূরণ দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মদবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে আহতের পরিবার।

Advertisement

২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের আঘাতে অটোরিকশাচালক ঘটনাস্থলে মারা যাওয়ার সেই ঘটনায় রিকশায় থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর চার মাসের গর্ভের সন্তান মারা যায়। সেদিনের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী ও তাদের আরেক সন্তান ও একজন আত্মীয় গুরুতর আহত হয়।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) কার্যালয়ে আহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর ছোটভাই ফরহাদ হোসেন এ সব তথ্য জানান। এ ঘটনায় মামলা গ্রহণে গড়িমসি ও তথ্য গোপনের অভিযোগ করেন পুলিশের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দাবি করেন।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে মদ কিনে ফেরার পথে ২ ছাত্রসহ আটক ৪

Advertisement

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেদিন ওই রিকশায় ছিলেন আমার বড় বোন কাকলি আক্তার (২৬), তার স্বামী সবুজ আহমেদ (৩০), তাদের ২৬ মাসের সন্তান শোয়াইব এবং কাকলির ভাতিজি জান্নাত (১৪)। আমার বোন ছিলেন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তারা সবাই সাভারের কলমার দোসাইদ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাকলি সাভারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপ শেষ করে অটোরিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনের ইউটার্নে মোড় নিয়ে কলমার সড়কে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সটি তাদের রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এসময় রিকশায় থাকা সবাই ছিটকে পড়ে যান। পরে সেখানেই রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস (৩০) মারা যান।

ফরহাদ দাবি করে বলেন, এরই মধ্যে আহতদের চিকিৎসায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে আমাদের পরিবারের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে এসেছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

আরও পড়ুন: অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এদিকে সবুজ আহমেদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর একদিনের বেশি সময় আমার জ্ঞান ছিল না। আমার দুই পায়ে রিং পড়ানো হয়েছে। দুইমাস এ অবস্থায় থাকার পর আমার অপারেশন করা হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।’

Advertisement

আহত কাকলি বলেন, আমার গর্ভের সন্তানটি মারা গেছে। আমার মাথায় গভীর ক্ষত হয়েছে ও পা ভেঙ্গে গেছে।

এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শেষে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাভার মডেল থানায় যোগাযোগ করি। আমরা মামলার করার কথা বললে পুলিশ জানায়, তারা বাদী হয়ে এরই মধ্যে একটি মামলা করেছে। পরে মামলার বাদী সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রাসেল মাহমুদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি। তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক বাবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।’

আরও পড়ুন: নিরাপদ ক্যাম্পাস দাবিতে জাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তিনি আরও বলেন, আমি একটি মামলা করার কথা বললে উপপরিদর্শক বাবুল আমাকে মামলা না করার পরামর্শ দেন। এরপর সোমবার রাত ৯টার দিকে বাবুল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বাবুল দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত অ্যাম্বুলেন্সের কোনো সন্ধান পাননি বলে জানান।

ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও আমরা কোনো তথ্য পাইনি। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করার কথা জানালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। আমরা পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি জানতে পারি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একই ঘটনায় দুটি মামলা হয় না। তারা চাইলে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে, আমরা সেটি মামলার সঙ্গে এটাচ করে দিব। এর বাইরে গিয়ে তারা চাইলে কোর্টে আলাদা করে মামলা করতে পারে।’

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুল হোসেনের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন: ভেতরে সিন্ডিকেট সভা, বাইরে বিক্ষোভ

এদিকে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।

মাহবুব সরদার/জেএস/এমএস