একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার আকবর আলী শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২০ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলার আসামি চারজন। তাদের মধ্যে আকবর আলী শেখ ও আব্দুল হামিদ খান কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বাকি দুজন পলাতক।
গত ২৪ নভেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট শেষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। তারই ধারাবাহিকতায় মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
গত জুনে চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। পরে এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর তদন্ত শেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সানাউল হক এ তথ্য জানান। এটি ছিল তদন্ত সংস্থার ৭৯তম প্রতিবেদন।
সংস্থা জানায়, সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ ও দেবহাটা থানা এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করা হয়েছে। চার আসামির মধ্যে আকবর আলী ছাড়া অন্যরা পলাতক ছিলেন।
এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় ৭টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নলতা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল হামিদ খানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আব্দুল হামিদ খান (৭৯) কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের পূর্ব নলতা গ্রামের মৃত নেছার উদ্দিন খানের ছেলে। চার আসামির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
অভিযোগ-১-এ বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রহমতুল্লা মোড়ল, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা মোড়লকে সঙ্গে করে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন নলতা হাটে বাজার করতে যান। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছারুল মাহমুদ নলতা হাটে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের একটি বাসে পাকিস্তানি সেনা থাকার সন্দেহে গ্রেনেড ছোড়ে। কিন্তু তাতে কেউ হতাহত হয়নি। এর প্রতিশোধ নিতে বিকেল ৫টার দিকে আসামিরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ইন্দ্রনগর মাদরাসায় একত্র হয়ে নলতা হাটে আক্রমণ করে। এসময় রাজাকাররা স্বরাব্দীপুর গ্রামের মাদার আলী গাজীকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রাজাকারদের গুলিতে ইন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুল রহমান ওরফে মেদু মোড়ল ও রহমতুল্লাহ মোড়ল গুরুতর আহত হন। ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় নিজ বাড়িতে রহমতুল্লাহ মোড়লের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ-২-এ বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৬ মে আনুমানিক ১২টার সময় সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার ইন্দ্রনগর মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্প হতে আসামিরাসহ পাকিস্তানি সেনারা দেবহাটার হাদিপুর গ্রামের ঘোষবাড়িতে হামলা করে। সেখান থেকে নরেন্দ্রনাথ ঘোষকে আটক করে বাড়ির পেছনে নিয়ে গুলি হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা শরৎচন্দ্র ঘোষ, গোপিনাথ ঘোষ, হেমনাথ ঘোষ এবং ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসকে আটক করে বাড়ির দক্ষিণ দিকে ডোবায় নিয়ে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে রাখে। সেখানে নরেন্দ্রনাথ ঘোষের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাধা দিতে গেলে আসামিরা তাকে আটক করে নির্যাতন করে। ঘোষবাড়ির মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এফএইচ/এএএইচ/জেআইএম