বিশেষ প্রতিবেদন

রাজাকার পুত্রের মনোনয়ন নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব

মনোনয়ন দেয়ার সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক রাজাকার পুত্রকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও জেলা আওয়ামী লীগ বলছে মন্ত্রী ইচ্ছে করলেই যে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিতে পারেন না। তার দেয়া মনোনয়ন সম্পূর্ণরূপে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক।জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নাসিরনগরে ৪ দিনের সফরে আসেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক। মূলত আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতেই তার এই সফর। দলীয় নিয়ম অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিধান থাকলেও শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় বসে মন্ত্রী স্থানীয় হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়াকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। তবে ফারুক হরিপুর ইউনিয়নের চিহ্নিত রাজাকার তাজুল ইসলাম ওরফে তাইজুদ্দিনের ছেলে হওয়ায় তার মনোনয়নের বিরোধিতা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে অনেকটা প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. দৌলত রেজা জাগো নিউজকে বলেন, মন্ত্রী আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই চিহ্নিত রাজাকার তাজুল ইসলামের ছেলে ফারুক মিয়াকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা মন্ত্রীর দেয়া এই মনোনয়নের বিরোধিতা করছি, আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। কেননা কোনো রাজাকারের পুত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারে না।তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ফারুক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এতো দিন আমাকে কেউ রাজাকারের ছেলে বলেনি। এখন আমি নির্বাচনে আসায় আমার প্রতিপক্ষের লোকজন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজাকারের ছেলে বলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে যাবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ফারুকের পিতা তাজুল ইসলাম ওরফে তাইজুদ্দিন একজন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কোনোভাবেই চাই না যে মানুষ ৭১ সালে মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার সন্তান আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে নির্বাচন করুক।এদিকে একই উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গোলম সামদানীকে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে মন্ত্রীর ভাগ্নে হুমায়ূন কবির ওরফে দরবেশকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ নিয়েও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে নিন্দার ঝড় বইছে।গুনিয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সামদানী জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ছায়েদুল হক ‘ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আমি সত্যিকারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি বিধায় ওই নির্বাচনে ‘ঘড়ি’ প্রতীকে ভোট না দিয়ে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলাম। এজন্য মন্ত্রী আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে জনমত বিবেচনা না করেই তার ভাগ্নে হুমায়ূন কবির দরবেশকে মনোনয়ন দিয়েছেন।এদিকে হুমায়ূনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে গুনিয়াউক গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সামদানীর কর্মী-সমর্থকরা। মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধরা হুমায়ূনের মনোনয়ন বাতিল করে সামদানীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ারও দাবি জানান।এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।এ সব ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে ডাক-বাংলোয় বসে কয়েকটি ইউনিয়নে প্রার্থীদের মনোয়ন দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন রাজাকারের ছেলে রয়েছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে। মন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। পাশাপাশি এটি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় দফায় আগামী ২৩ এপ্রিল নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ও গুনিয়াউকসহ ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।এসএস/আরআইপি