দেশজুড়ে

গমের ব্লাস্ট রোগে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় একশ একর জমির গমে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। গম পরিপক্ব হওয়ার আগেই শীষ সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ শীষেই কোনো দানা নেই। আবার পুড়ে যাচ্ছে গাছও। হঠাৎ এ রোগ দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, কৃষি অফিসকে জানানোর পরও সরজমিনে আসেননি কোনো কর্মকর্তা। শুধু ফোনে পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এবার গম চাষে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের মধ্যে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বারি-৩৩ জাতের বীজ সরবরাহ করলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় কম। ফলে বারি-২৮ ও ২৯ সহ বিভিন্ন পুরনো জাতের বীজ বপন করেন অনেক কৃষক। এসব পুরনো জাতের বীজ বপন করায় বিক্ষিপ্তভাবে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। জেলায় চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।

Advertisement

সদর উপজেলার রাজাপুর, শায়েস্তপুর ও কৈজুরি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার রাজাপুর, বিলের মাঠ, ভরের মাঠসহ আশপাশ এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে গমের। বাতাসে ঢেউ খেলছে গমের সোনালি শীষ। দেখে মনে হচ্ছে গম পেকে গেছে। ধরে দেখার পর বুঝা যায় গমের বেশিরভাগ শীষে দানা নেই। শীষের সঙ্গে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছও। চাষিদের তথ্যানুযায়ী গম পরিপক্ব হতে এখনো ১৫-২০ দিন বাকি আছে।

এদিকে এক বিঘা জমিতে ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকদের সব মিলিয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। লিজের জমি হলে বিঘায় খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। এখন গমে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় লোকসানের দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।

রাজাপুরের চাষি আনোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, ‘গমের ফলন শুরু থেকে এ রোগটা দেখা দিয়েছে। এরপর কৃষি অফিসে জানালেও তারা মাঠে এলো না। শুধু ফোনে বলে এই-ওই ওষুধ দেন। রোগ শুরুর সময় যদি কৃষি অফিসের লোকজন আসতো, তাহলে হয়তো আমাদের এত বড় ক্ষতি হতো না। মাঠের সব গমে এ রোগ হয়েছে। আমার মতো অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘গম দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে, কিন্তু পাকেনি। ফলের মধ্যে কোনো দানা নাই। যেখানে প্রতি বিঘায় ১৫-২০ মণ ফলন পাওয়া যায়, এবার একমণও পাবো কি-না কে জানে। কিন্তু খরচ তো ঠিকই হয়েছে। এখন ধার দেনা করে ক্ষেত পরিষ্কার কতে হবে।’

Advertisement

আরেক চাষি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এবার গম বেশ ভালোই হচ্ছিল। ভেবেছিলেন ফলনও ভালো পাবেন। কিন্তু হঠাৎ রোগ দেখা দিলো। ওষুধ দিলেও কাজ হয়নি। তবে কৃষি অফিসের কেউ মাঠে দেখতে আসেনি। এবার কোনো ফলন তো পাবো না, এরসঙ্গে বীজও পাবো না। ধার-দেনা ও ঋণ করে চাষ করেছিলাম। এ অবস্থায় কী করবো বুঝতে পারছি না।’

মনোয়ার হোসেন মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ‘একটু লাভের আশায় ৪০ বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে গমের আবাদ করছি। কিন্তু এবার তো কোনো ফলন হয়নি। ভেবেছিলাম ফলন তোলার পর গম বিক্রি করে সব ধারদেনা শোধ করবো। এখন তো পুরোটাই লস। এখন আবার ক্ষেত পরিষ্কার করতে হবে। এবার গম চাষ করে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।’

তাদের মতো আলতাফ হোসেন, উম্বার, মিলন হোসেন, জহির রাজও এবার গম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান জাগো নিউজকে বলেন, এবার গমের ফলন বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে। তবে সদর উপজেলার বসন্তপুরের কিছু কিছু স্থানে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চাষিদের রোগ দমনের পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চাষিরাও ছত্রাক ও বালাইনাশক স্প্রে করেছে। আগামী মৌসুমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি-৩৩ জাতের গম চাষের পরামর্শ দিয়েছি।

এসজে/জেআইএম