আজ আমরা পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমা এবং অষ্টম রোজা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র রমজানের রহমতের দশকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রহমত বর্ষণ করছেন। তার নেক বান্দারা রহমত লাভের আশায় সব ধরনের নেক আমল করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে তারা রমজানের পবিত্র জুমার দিন বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করেন। রমজানের দিন ছাড়াও ইসলামে পবিত্র জুমার গুরুত্ব অতিব্যাপক। কুরআন ও হাদিস থেকে জুমার নামাজের পবিত্রতা ও গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়।
পবিত্র কুরআনে জুমার গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯)। ইসলামে জুমার দিনের নামাজের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তা এই আয়াত স্পষ্ট করে।
হাদিস পাঠেও জুমার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি, এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য’ (আবু দাউদ)। তাই আমাদের এমন কোনো কারণ নেই যে জুমার নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকব, আমাদেরকে অবশ্যই জুমার দিন বাজামাত নামাজ আদায় করতে হবে।
অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (আবু দাউদ)।
জুমার ফযিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)। হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)।জুমার ফযিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)।
হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)। একটু ভেবে দেখুন, মহান আল্লাহপাক পবিত্র জুমার দিনকে আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গোষণা করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এই দিনের যথাযথ মূল্যায়ণ করছি? আমরা কি আমাদের জাগতিক কাজকর্ম বন্ধ করে আজানের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে খুতবা, নামাজ আদায় এবং দিনের অন্যান্য সময় আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করি? তাই এদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ, তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও’ (মিশকাত)।
পবিত্র জুমার দিনের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখেন’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত) জুমার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, কুরআন শরিফের একটি সুরার নামই রাখা হয়েছে সুরা ‘জুমা’। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহতায়ালা জুমাকে কত গুরুত্বই না দিয়েছেন। তাই যখন জুমার নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন আমাদের উচিত হবে, সব কাজকর্ম ও ব্যবসা বণিজ্য গুটিয়ে মসজিদের দিকে রওয়ানা হওয়া। মসজিদে গিয়ে খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা, কেননা খুতবার মাঝে দুই রাকাত নামাজ নিহিত। তাই জুমার খুতবা শোনাও জরুরি।
এছাড়া জুমার দিন আল্লাহতায়ালা মুমিনের পুণ্যের প্রতিদান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। এজন্য জুমার দিন জুমার নামাজ ছাড়াও যথাসম্ভব সকল প্রকার পুণ্য কাজ আমাদেরকে করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এ মাহে রমজানের দিনগুলো বিশেষ করে জুমার দিনের ফযিলত উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/জিকেএস