পূর্ববিরোধের জেরে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে রবিউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় আগুন দেওয়া হয়েছে ৬টি বাড়িতে। ঘটনার পর মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে। অন্যদিকে গ্রামবাসী লুটপাটের ভয়ে তাদের বাড়ির আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিস সরিয়ে নিচ্ছেন।
আসবাবপত্র ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়ার সময় জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের সাত্তার মণ্ডলের পুত্রবধূ সোনিয়া খাতুন বলেন, আমাদের গ্রামে একটা খুন হয়েছে। অনেক বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হয়তো লুটপাট শুরু হতে পারে। এজন্য আমার স্বামী বাড়িতে আসেনি। শুধু আমি বাড়ির মালামাল অন্যদের সহযোগিতায় আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
একই আতঙ্কের কথা প্রকাশ করে বৃদ্ধা বুলবুলি বেগম বলেন, এলাকায় কোনো মারামারি বা হত্যার ঘটনা ঘটলেই লুটপাট শুরু হয়। তাই ঘরের জিনিসপত্র আত্মীয়দের বাড়িতে রাখার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, হরিণাকুন্ডু পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সমর্থক রবিউল ইসলাম। তার সঙ্গে জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী আক্কাচ আলীর বিরোধ চলছিল। এরই জেরে শুক্রবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় মসজিদে নামাজ পড়ে বের হলে ৪-৫ জন যুবক তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মারা যান তিনি।
এ ঘটনার পর নিহতের স্বজনরা জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের আক্কাচ আলীর বাড়িসহ আরও ৬ টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে আক্কাচ আলীর লোকজন নিহতের ভাগনে রনিকে কুপিয়ে জখম করে।
জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ময়না খাতুন বলেন, আক্কাচ আলীর পাশের বাড়ি আমাদের। রাতে রবিউলের মৃত্যুর পর আক্কাচ আলীর বাড়িসহ আমাদের অনেকগুলো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেক ঘর পুড়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে পুরুষ মানুষও বাড়ি থেকে ভয়ে অন্যত্র রয়েছে। আমরাও ভয়ের মধ্যে আছি। আক্কাচ আলীর বাড়িতেও কেউ নেই।
নিহত রবিউলের ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। শত্রুতা করে ওরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। এর সুষ্ঠ বিচার চাই আমরা।
আরও পড়ুন: আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুপিয়ে খুন, বদলা নিতে ৬ বাড়িতে আগুন
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হরিণাকুন্ডু থানার ওসি (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, রবিউল ইসলামের মৃত্যুর পর এলাকায় বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। তবে কোনো পক্ষই এখনো থানায় অভিযোগ দেয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকায় দুটি সামাজিক পক্ষ রয়েছে। রবিউল ইসলাম তার সমর্থক। মূলত পূর্ববিরোধেই এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে কোনো লুটপাট হয়নি। হয়তো ভয়ে অনেকেই তাদের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। পুলিশকেও আমরা বলেছি। তারা বলছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে ৬টি বাড়ির কিছু ঘর পুড়ে গেছে। বেশ কিছু বিচালীর গাদাও পুড়েছে।
বাড়ি লুটপাটের ভয়ে আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষেয় জানতে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএইচআর