দেশজুড়ে

পানির ওপর এক রাতে গড়ে ওঠে ‘জিনের মসজিদ’

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের শিবপুরে অবস্থিত প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদ। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘জিনের মসজিদ’ নামে পরিচিত। মোগল কারুকার্য, নান্দনিক ডিজাইন ও কৌতূহলের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই মসজিদটি দেখতে আসেন।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদটি মানুষের নকশা ও শ্রমিকের শ্রমে গড়ে ওঠেনি। মসজিদটির জায়গায় একসময় অথৈ পানি ছিল। এক রাতেই পানির ভেতর মাটি ফেলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তবে পুরোনো কোনো নামফলক না থাকায় মসজিদটির ইতিহাস বা নির্মাণ সাল জানা যায়নি।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, মসজিদটি নির্মাণের পর জিনের ভয়ে ৫০-৬০ বছর কেউ নামাজ পড়তে যেতেন না। পরবর্তী সময়ে মসজিদ এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বসতবাড়ি নির্মাণ হলে মানুষের ভয় কাটতে থাকে। অনেকেই নামাজ পড়া শুরু করেন। কিন্তু তখনো বেশিরভাগ সময় নামাজে অপরিচিত অনেককে দেখা যেতো বলে দাবি প্রবীণদের। মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, পাঁচ কাঠা জমির ওপর স্থাপিত চতুর্ভুজ আকৃতির মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। মসজিদের ভেতরে তিনটি কাতার বা সারি রয়েছে। প্রতি কাতারে ১০ জন করে মোট ৩০ জন জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সামনে সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো একটি পাকা মাঠ রয়েছে। মুসল্লি সংখ্যা কাতারের ধারণক্ষমতার বেশি হলে মাঠটিতে নামাজ পড়েন অনেকে। মসজিদের পাশেই আছে একটি পুকুর। মুসল্লিদের অজুর জন্য এতে একটি শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে।

স্থানীয় মুসল্লি আব্দুল হালেম মৃধা (৫০) জাগো নিউজকে বলেন, “সবাই মসজিদটিকে ‘জিনের মসজিদ’ বলেন। আমরা ছোটবেলা থেকে এ মসজিদে নামাজ পড়ি। তখন থেকেই সবার কাছে শুনে আসছি এটি জিনের তৈরি মসজিদ। এ মসজিদে থাকা হাফেজরা আগে জিন দেখেছেন। তবে এখন আর দেখা যায় না।”

মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বেপারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ২৫-৩০ বছর ধরে এখানে ইমামতি করছি। নামাজ পড়িয়ে অন্তরে প্রশান্তি পাই। গরমকালে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শীতের সময় ভেতরে গেলেই গরম লাগে। পূর্বপুরুষদের অনেকে বলেছেন, মসজিদটি জিনেরা তৈরি করেছেন। অনেক দূরের মানুষজন এখানে নামাজ পড়তে আসেন। গ্রামের সবাই এখানে জুমা, তারাবি পড়েন।’

কথা হয় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম তালুকদারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “মসজিদটির বয়স সাড়ে চারশ বছরের মতো হবে। মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি মসজিদটি জিনেরা তৈরি করেছে। এখানে দীর্ঘ ২৭-২৮ বছর একজন হাফেজ ছিলেন। তিনি রাতে জিনদের নামাজ পড়তে দেখেছেন। আমরা অনেক সময় রাতে ভিন্ন রকম অপরিচিত শব্দ শুনতাম। এ শব্দকে ‘জিনের শব্দ’ মনে করে অনেকে মসজিদটিকে ‘জিনের মসজিদ’ বলেন। কয়েক বছর আগেও মসজিদের ভেতরে কোনো কথা বললে কথাটি রিপিট হতো। পরে আমরা ভেতরে হালকা সংস্কার করেছি। এরপর থেকে কথা রিপিট হয় না।”

আব্দুস সালাম তালুকদার বলেন, মসজিদটির ডিজাইন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কারের উদ্যোগ নিলে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি আরও কয়েকশ বছর টিকে থাকতো।

এসআর/জিকেএস