দেশজুড়ে

বৈশাখকে ঘিরে কর্মব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

বৈশাখে কদর বাড়ে মাটির জিনিসপত্রের। চৈত্র মাসজুড়ে মাটির এসব জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত কুমারপাড়ার বাসিন্দারা। দিনরাত পরিশ্রমে চলছে মৃৎশিল্পীদের। করোনার লোকসান কাটিয়ে আশা এবারের মেলায় লাভবান হবেন তারা।

সরেজমিনে আব্দুল্লাপুর কুমারপাড়ায় দেখা যায়, গ্রামের নারী-পুরুষরা মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া শিশুদের খেলনাসহ নানা উপকরণ তৈরি করছে। কেউ প্রস্তুত করছেন মাটি, কেউ তৈরি করছেন তৈজসপত্র, কেউ আবার এসব রাঙিয়ে তুলছেন রং-তুলির আঁচড়ে। মাটি দিয়ে তৈরি পণ্য রোদে শুকাতেও কেউ কেউ ব্যস্ত। তাদের মত ব্যস্ত জেলার ৬ উপজেলার বাকি অন্য কুমার ও পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। প্রায় শতবছর ধরে এ গ্রামের পাল পরিবারের মানুষ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

মৃৎশিল্পীরা জানান, শুধু ব্যবসার জন্য নয় যুগের পর যুগ ধরে এসব মানুষ ধরে রেখেছে বাংলার মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য। তবে এতো খাটনির পরও কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ। করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠার লগ্নে পণ্য তৈরি প্রধান উপকরণ এটেল মাটির দামবৃদ্ধি অন্যদিকে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমেছে।

আরও পড়ুন: বৈশাখে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

আব্দুল্লাপুর কুমারপাড়ার সুজাতাপাল এ মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করেন ৫০ বছর ধরে, কথা হলে ব্যস্ততার সঙ্গে আক্ষেপের কথা জানান এ নারী। তিনি বলেন, বৈশাখের জন্য দিনরাত এক করে বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানাইসি। এগুলো বিক্রি হলে আমরা লাভবান হবো, সংসার পুলাপাইন নিয়ে কোনোমতে থাকতে পারুম। সেই আশায় আছি।

একই গ্রামের মঙ্গলীপাল বলেন, যত্ন সহকারে মাটির জিনিস বানাই। বৈশাখ আসলে অনেকে কিনে, চাহিদা থাকে বেশি। আমাদের কাজের চাপও থাকে বেশি।

অপু পাল নামের এক যুবক বলেন, প্লাস্টিকের জিনিস বের হয়ে আমাদের জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। বাপ দাদার ব্যবসা তাই ধরে রাখছি। আমাদের বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। তৈরি করে যদি ভেঙে ফেলতে হয় তবে কিভাবে চলুম। জিনিসপত্র বানাতে প্রয়োজন এটেল মাটির। আগে একট্রলার এটেল মাটির দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন সেটি আনতে ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়।

আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সঙ্কটে পেশা ছাড়ছেন নরসিংদীর মৃৎশিল্পীরা 

সবিতা রানী পাল জানান, রোদে শুকাতে দেই কিন্তু আগুনে পুড়াতে পারি না। কারণ লাকড়ি-কাঠের অনেক দাম। আমাদের গ্রামের অর্ধেক মানুষ কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। এ ব্যবসা রাখতে হলে সরকারের উচিত আমাদের সাহায্য করা। নয়তো আমাদের ছাইরা দিতে হবে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, করোনাকালীন সময় অনেকে ব্যবসা পরিবর্তন করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা আছে যারা করোনাকালীন সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করার। এটি আমরা বিসিকের পক্ষ থেকে বিতরণ করছি। আরাফাত রায়হান সাকিব/আরএইচ/জিকেএস